পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৫৪
গল্প-দশক।

 বিনোদ দুর্ব্বল প্রকৃতির লোক—এক দিকে সে পরের প্রতি নির্ভর না করিয়া থাকিতে পারে না, অপরদিকে যে তাহার কানে যেরূপ সন্দেহ তুলিয়া দেয় সে তাহাই বিশ্বাস করিয়া বসে। ম্যানেজার যে চুরি করিতেছে মুহূর্ত্তকালের মধ্যেই এ বিশ্বাস তাহার দৃঢ় হইল। বিশেষতঃ কাজ সে নিজে দেখে না বলিয়া কল্পনায় সে নানা প্রকার বিভীষিকা দেখিতে লাগিল-অথচ কেমন করিয়া ম্যানেজারের চুরি ধরিতে হইবে তাহারও রাস্তা সে জানে না। স্পষ্ট করিয়া তাহাকে কিছু বলিতে পারে এমন সাহস নাই—মহা মুষ্কিল হইল।

 অম্বিকাচরণের একাধিপত্যে কর্ম্মচারিগণ সকলেই ঈর্ষ্যান্বিত ছিল। বিশেষতঃ গৌরীকান্ত তাঁহার যে দূরসম্পর্কীয় ভাগিনেয় বামাচরণকে কাজ দিয়াছিলেন, অম্বিকার প্রতি বিদ্বেষ তাহারই সর্ব্বাপেক্ষা অধিক ছিল। কারণ, সম্পর্ক প্রভৃতি অনুসারে সে নিজেকে অম্বিকার সমান জ্ঞান করিত এবং অম্বিকা তাহার আত্মীয় হইয়াও কেবলমাত্র ঈর্ষ্যাবশতঃই তাহাকে উচ্চপদ দিতেছে না, এ ধারণা তার দৃঢ় ছিল। পদ পাইলেই পদের উপযুক্ত যোগ্যতা আপনি যোগায় এই তাহার মত। বিশেষতঃ ম্যানেজারের কাজকে সে অত্যন্ত তুচ্ছজ্ঞান করিত; বলিত, সেকালে রথের উপর যেমন ধ্বজা থাকিত, আজকাল আপিসের কাজে ম্যানেজার সেইরূপ-ঘোড়াবেটা খাটিয়া মরে আর ধ্বজা মহাশয় রথের সঙ্গে সঙ্গে কেবল দর্পভরে দুলিতে থাকেন।