রিত জানাইয়া কহিলেন—বিনোদের এ অবস্থায় ত আমি কাজ ছেড়ে দিতে পারিনে।
ইন্দ্রাণী অনেকক্ষণ প্রস্তরমূর্ত্তির মত স্থির হইয়া রহিল অবশেষে অন্তরের সমস্ত বিরোধদ্বন্দ্ব সবলে দলন করিয়া নিশ্বাস ফেলিয়া কহিল—না, এখন ছাড়তে পার না।
তাহার পরে কোথায় টাকা কোথায় টাকা করিয়া সন্ধান পড়িয়া গেল—যথেষ্ট পরিমাণে টাকা আর জুটে না। অন্তঃপুর হইতে গহনাগুলি সংগ্রহ করিবার জন্য অম্বিকা বিনোদকে পরামর্শ দিলেন। ইতিপূর্ব্বে ব্যবসায় উপলক্ষে বিনোদ সে চেষ্টা করিয়াছিলেন, কখন কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই। এবারে অনেক অনুনয় বিনয় করিয়া, অনেক কাঁদিয়া কাটিয়া, অনেক দীনতা স্বীকার করিয়া গহনাগুলি ভিক্ষা চাহিলেন। নয়নতারা কিছুতেই দিলেন না তিনি মনে করিলেন, তাঁহার চারিদিক হইতে সকলি খসিয়া পড়িবার উপক্রম হইয়াছে; এখন এই গহনাগুলি তাঁহার একমাত্র শেষ অবলম্বনস্থল—এবং ইহা তিনি অন্তিম আগ্রহ সহকারে প্রাণপণে চাপিয়া ধরিলেন।
যখন কোথা হইতেও কোন টাকা পাওয়া গেল না, তখন ইন্দ্রাণীর প্রতিহিংসা-ভ্রূকুটির উপরে একটা তীব্র আনন্দের জ্যোতিঃ পতিত হইল। সে তাহার স্বামীর হাত চাপিয়া ধরিয়া কহিল, তোমার যাহা কর্ত্তব্য তাহা ত করিয়াছ এখন তুমি ক্ষান্ত হও, যাহা হইবার তা হউক।