পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ক্ষুধিত পাষাণ।
১৬৯

 তখন গ্রীষ্মকালের আরম্ভে বাজার নরম; আমার হাতে কোন কাজ ছিল না। সূর্য্যাস্তের কিছু পূর্ব্বে আমি সেই নদীতীরে ঘাটের নিম্নতলে একটা আরাম-কেদারা লইয়া বসিয়াছি। তখন শুস্তানদী শীর্ণ হইয়া আসিয়াছে;—ওপারে অনেকখানি বালুতট অপরাহ্নের আভায় রঙীন্ হইয়া উঠিয়াছে, এপারে ঘাটের সোপানমূলে স্বচ্ছ অগভীর জলের তলে মুড়িগুলি ঝিক্‌ ঝিক্ করিতেছে। সেদিন কোথাও বাতাস ছিল না। নিকটের পাহাড়ে বন-তুলশী, পুদিনা ও মৌরির জঙ্গল হইতে একটা ঘন সুগন্ধ উঠিয়া স্থির আকাশকে ভারাক্রান্ত করিয়া রাখিয়াছিল।

 সূর্য্য যখনি গিরিশিখরের অন্তরালে অবতীর্ণ হইল তৎক্ষণাৎ দিবসের নাট্যশালায় একটা দীর্ঘ ছায়া-যবনিকা পড়িয়া গেল;—এখানে পর্ব্বতের ব্যবধান থাকাতে সূর্য্যাস্তের সময় আলো আঁধারের সম্মিলন অধিকক্ষণ স্থায়ী হয় না। ঘোড়ায় চড়িয়া একবার ছুটিয়া বেড়াইয়া আসিব মনে করিয়া উঠিব উঠিব করিতেছি, এমন সময়ে সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শুনিতে পাইলাম। পিছনে ফিরিয়া দেখিলাম, কেহ নাই।

 ইন্দ্রিয়ের ভ্রম মনে করিয়া পুনরায় ফিরিয়া বসিতেই, একে বারে অনেকগুলি পায়ের শব্দ শোনা গেল—যেন অনেকে মিলিয়া ছুটাছুটি করিয়া নামিয়া আসিতেছে। ঈষৎ ভয়ের সহিত এক অপরূপ পুলক মিশ্রিত হইয়া আমার সর্বাঙ্গ পরিপূর্ণ করিয়া তুলিল। যদিও আমার সম্মুখে কোন মূর্ত্তি ছিল না

১৫