বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৭০
গল্প-দশক।

তথাপি স্পষ্ট প্রত্যক্ষবৎ মনে হইল, যে, এই গ্রীষ্মের সায়াহ্নে একদল প্রমোদচঞ্চল নারী শুস্তার জলের মধ্যে স্নান করিতে নামিয়াছে। যদিও সেই সন্ধ্যাকালে নিস্তব্ধ গিরিতটে, নদীতীরে, নির্জ্জন প্রাসাদে কোথাও কিছুমাত্র শব্দ ছিল না তথাপি আমি যেন স্পষ্ট শুনিতে পাইলাম নির্ঝরের শত ধারার মত সকৌতুক কলহাস্যের সহিত পরস্পরের দ্রুত অনুধাবন করিয়া আমার পার্শ্ব দিয়া স্নানার্থিনীরা চলিয়া গেল। আমাকে যেন লক্ষ্য করিল না। তাহারা যেমন আমার নিকট অদৃশ্য, আমিও যেন সেইরূপ তাহাদের নিকট অদৃশ্য। নদী পূর্ব্ববৎ স্থির ছিল, কিন্তু আমার নিকট স্পষ্ট বোধ হইল, স্বচ্ছতোয়ার অগভীর স্রোত অনেকগুলি বলয়শিঞ্জিত বাহুবিক্ষেপে বিক্ষুব্ধ হইয়া উঠিয়াছে, হাসিয়া হাসিয়া সখীগণ পরস্পরের গায়ে জল ছুঁড়িয়া মারিতেছে, এবং সন্তরণকারিণীদের পদাঘাতে জলবিন্দুরাশি মুক্তামুষ্টির মত আকাশে ছিটিয়া পড়িতেছে।

 আমার বক্ষের মধ্যে এক প্রকার কম্পন হইতে লাগিল; সে উত্তেজনা ভয়ের, কি আনন্দের, কি কৌতূহলের, ঠিক বলিতে পারি না। বড় ইচ্ছা হইতে লাগিল ভাল করিয়া দেখি কিন্তু সম্মুখে দেখিবার কিছুই ছিল না; মনে হইল, ভাল করিয়া কান পাতিলেই উহাদের কথা সমস্তই স্পষ্ট শোনা যাইবে,—কিন্তু একান্ত মনে কান পাতিয়া কেবল অরণ্যের ঝিল্লিরব শোনা যায়। মনে হইল আড়াই শত বৎসরের কৃষ্ণবর্ণ যবনিকা ঠিক আমার সম্মুখে দুলিতেছে—ভয়ে ভয়ে একটি