পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১০
গল্প-দশক।

স্ত্রীকে বলিলেন, তাঁহার উপযুক্ত চাক্‌রী আছে বটে কিন্তু পক্ষপাতী ইংরাজ গবর্মেণ্ট সে সকল পদে বড় বড় ইংরাজকে নিযুক্ত করে, বাঙ্গালী হাজার যোগ্য হইলেও তাহার কোন আশা নাই।

 শ্যামাশঙ্করী তাঁহার দেবর এবং মেঝযা’র প্রতি লক্ষ্যে এবং অলক্ষ্যে সর্ব্বদাই বাক্যবিষ প্রয়োগ করিতে লাগিলেন। গর্ব্বভরে নিজেদের দারিদ্র্য আস্ফালন করিয়া বলিতে লাগিলেন, আমরা গরীব মানুষ, বড়মানুষের মেয়ে এবং বড়মানুষের জামাইকে পোষণ করিব কেমন করিয়া? সেখানে ত বেশ ছিলেন কোন দুঃখ ছিল না—এখানে ডালভাত খাইয়া এত কষ্ট কি সহ্য হইবে?

 শ্বাশুড়ি বড়বৌকে ভয় করিতেন, তিনি দুর্ব্বলের পক্ষ অবলম্বন করিয়া কোন কথা বলিতে সাহস করিতেন না। মেজবৌও মাসিক পঞ্চাশ টাকা বেতনের ডালভাত এবং তদীয় স্ত্রীর বাক্য ঝাল খাইয়া নীরবে পরিপাক করিতে লাগিল।

 ইতিমধ্যে বড় ভাই ছুটিতে কিছুদিনের জন্য ঘরে আসিয়া স্ত্রীর নিকট হইতে অনেক উদ্দীপনাপূর্ণ ওজোগুণসম্পন্ন বক্তৃতা শ্রবণ করিতে লাগিলেন। অবশেষে নিদ্রার ব্যাঘাত যখন প্রতিরাত্রেই গুরুতর হইয়া উঠিতে লাগিল তখন এক দিন অনাথবন্ধুকে ডাকিয়া শান্তভাবে স্নেহের সহিত কহিলেন, তোমার একটা চাক্‌রির চেষ্টা দেখা উচিত, কেবল আমি একলা সংসার চালাইব কি করিয়া?