পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৭৪
গল্প-দশক।

অমূলক মিথ্যা কথা বলিয়া বোধ হইল যে আমি সেই বিশাল নিস্তব্ধ অন্ধকার ঘরের মাঝখানে দাঁড়াইয়া হা হা করিয়া হাসিয়া উঠিলাম।

 তখনি আমার মুসলমান ভৃত্য প্রজ্জ্বলিত কেরোসিন ল্যাম্প হাতে করিয়া ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। সে আমাকে পাগল মনে করিল কি না জানি না, কিন্তু তৎক্ষণাৎ আমার স্মরণ হইল যে, আমি ৺অমুকচন্দ্রের জ্যেষ্ঠপুত্র শ্রীযুক্ত অমুক নাথ বটে, ইহাও মনে করিলাম যে, জগতের ভিতরে অথবা বাহিরে কোথাও অমূর্ত্ত ফোয়ারা নিত্যকাল উৎসারিত ও অদৃশ্য অঙ্গুলির আঘাতে কোন মায়া-সেতারে অনন্ত রাগিণী ধ্বনিত হইতেছে কি না তাই আমাদের মহাকবি এবং কবিবরেরাই বলিতে পারেন কিন্তু এ কথা নিশ্চয় সত্য যে, আমি বরীচের হাটে তুলার মাশুল আদায় করিয়া মাসে সাড়ে চার শো টাকা বেতন লইয়া থাকি। তখন আবার আমার পূর্ব্বক্ষণের অদ্ভুত মোহ স্মরণ করিয়া কেরোসীন্‌-প্রদীপ্ত ক্যাম্প টেবিলের কাছে খবরের কাগজ লইয়া সকৌতুকে হাসিতে লাগিলাম।

 খবরের কাগজ পড়িয়া এবং মোগ্‌লাই খানা খাইয়া একটি ক্ষুদ্র কোণের ঘরে প্রদীপ নিবাইয়া দিয়া বিছানায় গিয়া শয়ন করিলাম। আমার সম্মুখবর্ত্তী খোলা জানালার ভিতর দিয়া অন্ধকার বনবেষ্টিত অরালী পর্ব্বতের উর্দ্ধদেশে একটি অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্র সহ কোটী যোজন দূর আকাশ হইতে সেই অতি