পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ক্ষুধিত পাষাণ।
১৭৯

এক অদ্ভুত ব্যাপার ঘটিতে থাকিত তাহা আমি বর্ণনা করিতে পারি না। ঠিক যেন একটা চমৎকার গল্পের কতকগুলি ছিন্ন অংশ বসন্তের আকস্মিক বাতাসে এই বৃহৎ প্রাসাদের বিচিত্র ঘরগুলির মধ্যে উড়িয়া বেড়াইত। খানিকটা দূর পর্য্যন্ত পাওয়া যাইত তাহার পরে আর শেষ দেখা যাইত না। আমিও সেই ঘূর্ণ্যমান বিচ্ছিন্ন অংশগুলির অনুসরণ করিয়া সমস্ত রাত্রি ঘরে ঘরে ঘুরিয়া বেড়াইতাম।

 এই খণ্ডস্বপ্নের আবর্ত্তের মধ্যে,এই ক্কচিৎ হেনার গন্ধ, ক্কচিৎ সেতারের শব্দ, ক্কচিৎ সুরভি জলশীকরমিশ্র বায়ুর হিল্লোলের মধ্যে একটি নায়িকাকে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎশিখার মত চকিতে দেখিতে পাইতাম। তাহারি জাফ্‌রান্‌ রঙের পায়জামা এবং দুটি শুভ্র রক্তিম কোমল পায়ে বক্রশীর্ষ জরির চটিপরা, বক্ষে অতিপিনদ্ধ জরির ফুলকাটা কাঁচলি আবদ্ধ, মাথায় একটি লালটুপি এবং তাহা হইতে সোনার ঝালর বুলিয়া তাহার শুভ্র ললাট এবং কপোল বেষ্টন করিয়াছে।

 সে আমাকে পাগল করিয়া দিয়াছিল। আমি তাহারই অভিসারে প্রতিরাত্রে নিদ্রার রসাতলরাজ্যে স্বপ্নের জটিলপথসঙ্কুল মায়াপুরীর মধ্যে গলিতে গলিতে কক্ষে কক্ষে ভ্রমণ করিয়া বেড়াইয়াছি।

 এক একদিন সন্ধ্যার সময় বড় আয়নার দুই দিকে দুই বাতি জ্বালাইয়া যত্নপূর্ব্বক শাহজাদার মত সাজ করিতেছি এমন সময় হঠাৎ দেখিতে পাইতাম আয়নায় আমার প্রতি-