হাব্শী, দেবদূতের মত সাজ করিয়া, খোলা তলোয়ার হাতে দাঁড়াইয়া। তাহার পরে সেই রক্তকলুষিত ঈর্ষ্যা-ফেনিল ষড়যন্ত্রসঙ্কুল ভীষণোজ্জ্বল ঐশ্বর্য্যপ্রবাহে ভাসমান হইয়া, তুমি মরুভূমির পুষ্পমঞ্জরী কোন্ নিষ্ঠুর মৃত্যুর মধ্যে অবতীর্ণ অথবা কোন্ নিষ্ঠুরতর মহিমাতটে উৎক্ষিপ্ত হইয়াছিলে?
এমন সময় হঠাৎ সেই পাগ্লা মেহের আলি চীৎকার করিয়া উঠিল—“তফাৎ যাও, তফাৎ যাও! সব ঝুঁট্ হ্যায় সব ঝুঁট্ হায়!” চাহিয়া দেখিলাম, সকাল হইয়াছে; চাপ্রাশি ডাকের চিঠিপত্র লইয়া আমার হাতে দিল এবং পাচক আসিয়া সেলাম করিয়া জিজ্ঞাসা করিল আজ কিরূপ খানা প্রস্তুত করিতে হইবে।
আমি কহিলাম, না, আর এ বাড়িতে থাকা হয় না। সেই দিনই আমার জিনিষপত্র তুলিয়া আপিস-ঘরে গিয়া উঠিলাম। আপিসের বৃদ্ধ কেরাণী করীম্ খাঁ আমাকে দেখিয়া ঈষৎ হাসিল। আমি তাহার হাসিতে বিরক্ত হইয়া কোন উত্তর না করিয়া কাজ করিতে লাগিলাম।
যত বিকাল হইয়া আসিতে লাগিল ততই অন্যমনস্ক হইতে লাগিলাম—মনে হইতে লাগিল এখনি কোথায় যাইবার আছে—তুলার হিসাব পরীক্ষার কাজটা নিতান্ত অনাবশ্যক মনে হইল, নিজামের নিজামৎও আমার কাছে বেশী কিছু বোধ হইল না—যাহা কিছু বর্ত্তমান, যাহা কিছু আমার চারি দিকে চলিতেছে ফিরিতেছে খাটিতেছে খাইতেছে সমস্তই