পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৯০
গল্প-দশক।

পূর্ব্বজন্মে তাপস বালক ছিল, এবং নির্ম্মল তপস্যার প্রভাবে তাহার শরীর হইতে শরীরাংশ বহুল পরিমাণে ক্ষয় হইয়া একটি সম্মার্জ্জিত ব্রাহ্মণ্যশ্রী পরিস্ফুট হইয়া উঠিয়াছে।

 মতিলাল বাবু তাহাকে পরম স্নেহভরে কহিলেন, বাবা তুমি স্নান করে এস, এইখানেই আহারাদি হবে।

 তারাপদ বলিল, রসুন্। বলিয়া তৎক্ষণাৎ অসঙ্কোচে রন্ধনের আয়োজনে যোগদান করিল। মতিলাল বাবুর চাকরটা ছিল হিন্দুস্থানী,মাছ কোটা প্রভৃতি কার্য্যে তাহার তেমন পটুত্ব ছিল না; তারাপদ তাহার কাজ নিজে লইয়া অল্পকালের মধ্যেই সুসম্পন্ন করিল এবং দুই একটা তরকারীও অভ্যস্ত নৈপুণ্যের সহিত রন্ধন করিয়া দিল। পাককার্য্যে শেষ হইলে তারাপদ নদীতে স্নান করিয়া বোঁচকা খুলিয়া একটি শুভ্র বস্তু পরিল; একটি ছোট কাঠের কাঁকই লইয়া মাথার বড় বড় চুল কপাল হইতে তুলিয়া গ্রীবার উপর ফেলিল এবং মার্জ্জিত পৈতার গোচ্ছা বক্ষে বিলম্বিত করিয়া নৌকায় মতিবাবুর নিকট গিয়া উপস্থিত হইল।

 মতিবাবু তাহাকে নৌকার ভিতরে লইয়া গেলেন। সেখানে মতিবাবুর স্ত্রী এবং তাঁহার নবমবর্ষীয়া এক কন্যা বসিয়াছিলেন। মতিবাবুর স্ত্রী অন্নপূর্ণা এই সুন্দর বালকটিকে দেখিয়া স্নেহে উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিলেন—মনে মনে কহিলেন আহা কাহার বাছা, কোথা হইতে আসিয়াছে—ইহার মা ইহাকে ছাড়িয়া কেমন করিয়া প্রাণ ধরিয়া আছে!—