পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
অতিথি।
১৯৯

দিলেন। তারাপদ যথাপরিমাণে আহার করিল; কিন্তু দুধ খাইল না। মৌনস্বভাব মতিলাল বাবুও তাহাকে দুধ খাইবার জন্য অনুরোধ করিলেন; সে সংক্ষেপে বলিল, আমার ভাল লাগে না।

 নদীর উপর দুই তিন দিন গেল। তারাপদ রাঁধাবাড়া বাজার করা হইতে নৌকাচালনা পর্য্যন্ত সকল কাজেই স্বেচ্ছা এবং তৎপরতার সহিত যোগ দিল। যে কোন দৃশ্য তাহার চোখের সম্মুখে আসে তাহার প্রতি তারাপদের সকৌতূহল দৃষ্টি ধাবিত হয়, যে কোন কাজ তাহার হাতের কাছে আসিয়া উপস্থিত হয়, তাহাতেই সে আপনি আকৃষ্ট হইয়া পড়ে। তাহার দৃষ্টি, তাহার হস্ত, তাহার মন সর্ব্বদাই সচল হইয়া আছে; এই জন্য সে এই নিত্যসচলা প্রকৃতির মত সর্ব্বদাই নিশ্চিন্ত উদাসীন অথচ সর্ব্বদাই ক্রিয়াসক্ত। মানুষমাত্রেরই নিজের একটি স্বতন্ত্র অধিষ্ঠানভূমি আছে;—কিন্তু তারাপদ এই অনন্ত নীলাম্বরবাহী বিশ্বপ্রবাহের একটি আনন্দোজ্জ্বল তরঙ্গ-ভূত ভবিষ্যতের সহিত তাহার কোন বন্ধন নাই-সম্মুখাভিমুখে চলিয়া যাওয়াই তাহার একমাত্র কার্য্য।

 এ দিকে অনেক দিন নানা সম্প্রদায়ের সহিত যোগ দিয়া অনেক প্রকার মনোরঞ্জনী বিদ্যা তাহার আয়ত্ত হইয়াছিল। কোন প্রকার চিন্তার দ্বারা আচ্ছন্ন না থাকাতে তাহার নির্ম্মল স্মৃতিপটে সকল জিনিষ আশ্চর্য্য সহজে মুদ্রিত হইয়া যাইত। পাঁচালি, কথকতা, কীর্ত্তনগান, যাত্রাভিনয়ের সুদীর্থ খণ্ডসকল