কামনা করিতেছে জানিয়াই বোধ করি তারাপদ এই গ্রামে এত দিন আবদ্ধ হইয়া রহিল।
কিন্তু বালিকাবস্থাতেও নারীদের অন্তররহস্য ভেদ করা সুকঠিন, চারুশশি তাহার প্রমাণ দিল।
বামুন ঠাক্রুণের মেয়ে সোনামণি পাঁচ বছর বয়সে বিধবা হয়; সেই চারুর সমবয়সী সখী। তাহার শরীর অসুস্থ থাকাতে গৃহপ্রত্যাগত সখীর সহিত সে কিছুদিন সাক্ষাৎ করিতে পারে নাই। সুস্থ হইয়া যে দিন দেখা করিতে আসিল সে দিন প্রায় বিনা কারণেই দুই সখীর মধ্যে একটা মনোবিচ্ছেদ ঘটিবার উপক্রম হইল।
চারু অত্যন্ত ফাঁদিয়া গল্প আরম্ভ করিয়াছিল। সে ভাবিয়াছিল, তারাপদ নামক তাহাদের নবার্জ্জিত পরমরত্নটি আহরণকাহিনী সবিস্তারে বর্ণনা করিয়া সে তাহার সখীর কৌতূহল এবং বিস্ময় সপ্তমে চড়াইয়া দিবে। কিন্তু যখন সে শুনিল, তারাপদ সোনামণির নিকট কিছুমাত্র অপরিচিত নহে, বামুনঠাকুরুণকে সে মাসী বলে এবং সোনামণি তাহাকে দাদা বলিয়া থাকে, যখন শুনিল, তারাপদ কেবল যে বাঁশিতে কীর্ত্তনের সুর বাজাইয়া মাতা ও কন্যার মনোরঞ্জন করিয়াছে তাহা নহে, সোনামণির অনুরোধে তাহাকে স্বহস্তে একটি বাঁশের বাঁশি বানাইয়া দিয়াছে, তাহাকে কতদিন উচ্চশাখা হইতে ফল ও কণ্টকশাখা হইতে ফুল পাড়িয়া দিয়াছে তখন চারুর অন্তঃকরণে যেন তপ্তশেল বিঁধিতে লাগিল চারু।