পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
অতিথি।
২১৩

তাহা অন্তর্যামীর অগোচর ছিল না এবং তারাপদও তাহা ভালরূপ জানিত। কিন্তু সোনামণি বেচারা ভীত হইয়া তৎক্ষণাৎ একরাশ মিথ্যা কৈফিয়ৎ সৃজন করিত; অবশেষে চারু যখন ঘৃণাভরে তাহাকে মিথ্যাবাদী বলিয়া সম্ভাষণ করিত তখন সে লজ্জিত শঙ্কিত পরাজিত হইয়া ব্যথিত চিত্তে ফিরিয়া যাইত। দয়ার্দ্র তারাপদ তাহাকে ডাকিয়া বলিত, “সোনা, আজ সন্ধ্যাবেলায় আমি তোদের বাড়ি যাব এখন!” চারু সর্পিণীর মত ফোঁস করিয়া উঠিয়া বলিত—“যাবে বৈ কি! তোমার পড়া করতে হবে না? আমি মাষ্টার মশায়কে বলে দেব না?”

 চারুর এই শাসনে ভীত না হইয়া তারাপদ দুই একদিন সন্ধ্যার পর বামুন ঠাক্‌রুণের বাড়ি গিয়াছিল। তৃতীয় বা চতুর্থ বারে চারু ফাঁকা শাসন না করিয়া আস্তে আস্তে এক সময় বাহির হইতে তারাপদর ঘরের দ্বারে শিকল আঁটিয়া দিয়া মা’র মসলার বাক্সর চাবি তালা আনিয়া তাল লাগাইয়া দিল। সমস্ত সন্ধ্যাবেলা তারাপদকে এইরূপ বন্দী অবস্থায় রাখিয়া আহারের সময় দ্বার খুলিয়া দিল। তারাপদ রাগ করিয়া কথা কহিল না এবং না খাইয়া চলিয়া যাইবার উপক্রম করিল। তখন অনুতপ্ত ব্যাকুল বালিকা করযোড়ে সানুনয়ে বারম্বার বলিতে লাগিল, “তোমার দুটি পায়ে পড়ি আর আমি এমন করব না! তোমার দুটি পায়ে পড়ি তুমি খেয়ে যাও!” তাহাতেও যখন তারাপদ বশ মানিল না, তখন