পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
প্রায়শ্চিত্ত।
১৯

নাই আনাইয়া লইল। অবশেষে হাতের বালা, রূপার চুড়ী, বেনারসি সাড়ী এবং শাল পর্য্যন্ত বিক্রয় শেষ করিয়া বিস্তর বিনীত অনুনয়পূর্ব্বক মাথায় দিব্য দিয়া, অশ্রুজলে পত্রের প্রত্যেক অক্ষর পংক্তি বিকৃত করিয়া বিন্ধ্য স্বামীকে ফিরিয়া আসিতে অনুরোধ করিল।

 স্বামী চুল খাট করিয়া দাড়ি কামাইয়া কোটপ্যাণ্ট্‌লুন্‌ পরিয়া ব্যারিষ্টার হইয়া ফিরিয়া আসিলেন। এবং হোটেলে আশ্রয় লইলেন। পিতৃগৃহে বাস করা অসম্ভব, প্রথমতঃ উপযুক্ত স্থান নাই, দ্বিতীয়তঃ পল্লিবাসী দরিদ্র গৃহস্থ জাতিনষ্ট হইলে একেবারে নিরুপায় হইয়া পড়ে। শ্বশুরগণ আচারনিষ্ঠ পরম হিন্দু; তাঁহারাও জাতিচ্যুতকে আশ্রয় দিতে পারেন না।

 অর্থাভাবে অতি শীঘ্রই হোটেল হইতে বাসায় নামিতে হইল। সে বাসায় তিনি স্ত্রীকে আনিতে প্রস্তুত নহেন। বিলাত হইতে আসিয়া স্ত্রী এবং মাতার সহিত কেবল দিন দুই তিন দিনের বেলায় দেখা করিয়া আসিয়াছেন, তাঁহাদের সহিত আর সাক্ষাৎ হয় নাই।

 দুইটি শোকার্ত্তা রমণীর কেবল এক সান্ত্বনা ছিল যে, অনাথবন্ধু স্বদেশে আত্মীয়বর্গের নিকটবর্ত্তী স্থানে আছেন। সেই সঙ্গে সঙ্গে অনাথবন্ধুর অসামান্য ব্যারিষ্টরী কীর্ত্তিতে তাহাদের মনে গর্ব্বের সীমা রহিল না। বিন্ধ্যবাসিনী আপনাকে যশস্বী স্বামীর অযোগ্য স্ত্রী বলিয়া ধিক্কার দিতে লাগিল, পুনশ্চ অযোগ্য বলিয়াই স্বামীর অহঙ্কার অধিক করিয়া অনুভব