পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২০
গল্প-দশক।

করিল। সে দুঃখে পীড়িত এবং গর্ব্বে বিস্ফারিত হইল। ম্লেচ্ছ আচার সে ঘৃণা করে, তবু স্বামীকে দেখিয়া মনে মনে কহিল, আজ কাল ঢের লোক ত সাহেব হয়, কিন্তু এমন ত কাহাকেও মানায় না—একেবারে ঠিক যেন বিলাতী সাহেব! বাঙ্গালী বলিয়া চিনিবার যো নাই!

 বাসাখরচ যখন অচল হইয়া আসিল, যখন অনাথবন্ধু মনের ক্ষোভে স্থির করিলেন, অভিশপ্ত ভারতবর্ষে গুণের সমাদর নাই এবং তাঁহার স্বব্যবসায়িগণ ঈর্ষ্যাবশতঃ তাঁহার উন্নতিপথে গোপনে বাধা স্থাপন করিতেছে; যখন তাঁহার খানার ডিশে আমিষ অপেক্ষা উদ্ভিজ্জের পরিমাণ বাড়িয়া উঠিতে লাগিল, দগ্ধ কুক্কুটের সম্মানকর স্থান ভর্জিত চিংড়ি একচেটে করিবার উপক্রম করিল, বেশভূষার চিক্কনতা এবং ক্ষৌরমসৃণ মুখের গর্ব্বোজ্জ্বল জ্যোতি ম্লান হইয়া আসিল—যখন সুতীব্র নিখাদে বাঁধা জীবন-তন্ত্রী ক্রমশঃ সকরুণ কড়ি মধ্যমের দিকে নামিয়া আসিতে লাগিল, এমন সময় রাজকুমার বাবুর পরিবারে এক গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটিয়া অনাথবন্ধুর সঙ্কটসস্কুল জীবনযাত্রায় পরিবর্ত্তন আনয়ন করিল। একদা গঙ্গাতীরবর্ত্তী মাতুলালয় হইতে নৌকাযোগে ফিরিবার সময় রাজকুমার বাবুর একমাত্র পুত্র হরকুমার ষ্টীমারের সংঘাতে স্ত্রী এবং বালক পুত্র সহ জলমগ্ন হইয়া প্রাণত্যাগ করে। এই ঘটনায় রাজকুমারের বংশে কন্যা বিন্ধ্যবাসিনী ব্যতীত আর কেহ রহিল না।