পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
প্রায়শ্চিত্ত।
২১

 নিদারুণ শোকের কথঞ্চিৎ উপশম হইলে পর রাজকুমার বাবু অনাথবন্ধুকে গিয়া অনুনয় করিয়া কহিলেন— “বাবা, তোমাকে প্রায়শ্চিত্ত করিয়া জাতে উঠিতে হইবে। তোমরা ব্যতীত আমার আর কেহ নাই!”

 অনাথবন্ধু উৎসাহসহকারে সে প্রস্তাবে সন্মত হইলেন। তিনি মনে করিলেন যে সকল বার্-লাইব্রেরী-বিহারী স্বদেশীয় বারিষ্টরগণ তাঁহাকে ঈর্ষ্যা করে এবং তাঁহার অসামান্য ধীশক্তির প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রকাশ করে না এই উপায়ে তাহা দের প্রতি প্রতিশোধ লওয়া হইবে।

 রাজকুমার বাবু পণ্ডিতদিগের বিধান লইলেন। তাঁহার বলিলেন অনাথবন্ধু যদি গোমাংস না খাইয়া থাকে তবে তাহাকে জাতে তুলিবার উপায় আছে।

 বিদেশে যদিচ উক্ত নিষিদ্ধ চতুষ্পদ তাঁহার প্রিয় খাদ্যশ্রেণীর মধ্যে ভুক্ত হইত,তথাপি তাহা অস্বীকার করিতে তিনি কিছুমাত্র দ্বিধা বৈাধ করিলেন না। প্রিয় বন্ধুদের নিকট কহিলেন—সমাজ যখন স্বেচ্ছাপূর্ব্বক মিথ্যা কথা শুনিতে চাহে তথন একটা মুখের কথায় তাহাকে বাধিত করিতে দোষ দেখি না। যে রসনা গোরু খাইয়াছে, সে রসনাকে গোময় এবং মিথ্যা কথা নামক দুটো কদর্য্য পদার্থ দ্বারা বিশুদ্ধ করিয়া লওয়া আমাদের আধুনিক সমাজের নিয়ম; আমি সে নিয়ম লঙ্ঘন করিতে চাহি না।

 প্রায়শ্চিত্ত করিয়া সমাজে উঠিবার একটা শুভদিন নির্দ্দিষ্ট