পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বিচারক।
৩৩

এতদিন একলা বসিয়া স্বর্গ গড়িয়াছিল সেও ভাঙ্গিয়া ধূলিসাৎ হইল।

 এই বাতায়নবাসিনী মুগ্ধ বালিকাটির প্রতি কখন্‌ মোহিতের লালায়িত দৃষ্টি পড়িল, কখন্‌ তাহাকে “বিনোদচন্দ্র” নামক মিথ্যাস্বাক্ষরে বারম্বার পত্র লিখিয়া অবশেষে একখানি সশঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত, অশুদ্ধ বানান ও উচ্ছ্বসিত হৃদয়াবেগপূর্ণ উত্তর পাইল—এবং তাহার পর কিছুদিন ঘাতপ্রতিঘাতে, উল্লাসে সঙ্কোচে, সন্দেহে সম্ভ্রমে, আশায় আশঙ্কায় কেমন করিয়া ঝড় বহিতে লাগিল,—তাহার পরে প্রলয়সুখোন্মত্ততায় সমস্ত জগৎ সংসার বিধবার চারিদিকে কেমন করিয়া ঘুরিতে লাগিল, এবং ঘুরিতে ঘুরিতে ঘূর্ণনবেগে সমস্ত জগৎ অমূলক ছায়ার মত কেমন করিয়া অদৃশ্য হইয়া গেল,—এবং অবশেষে কখন্‌ এক দিন অকস্মাৎ সেই ঘূর্ণ্যমান সংসারচক্র হইতে বেগে বিচ্ছিন্ন হইয়া রমণী অতি দূরে বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িল, সে সকল বিবরণ বিস্তারিত করিয়া বলিবার আবশ্যক দেখি না।

 একদিন গভীর রাত্রে পিতা মাতা ভ্রাতা এবং গৃহ ছাড়িয়া হেমশশি “বিনোদচন্দ্র” ছদ্মনামধারী মোহিতের সহিত এক গাড়িতে উঠিয়া বসিল। দেবপ্রতিমা যখন তাহার সমস্ত মাটি এবং খড় এবং রাংতার গহনা লইয়া তাহার পার্শ্বে আসিয়া সংলগ্ন হইল, তখন সে লজ্জায় এবং ধিক্কারে মাটিতে মিশাইয়া গেল।

 অবশেষে গাড়ি যখন ছাড়িয়া দিল, তখন সে কাঁদিয়া