পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
আপদ।
৬৩

মত ক্রমাগতই ঘুর খাইয়া মরিতেছিল; অবশেষে অশ্রুতরঙ্গে ডুবি হইবার সম্ভাবনা দেখা দিল।

 শরৎ কহিলেন, ডাক্তার বলিতেছে আর কিছুদিন থাকিয়া গেলে ভাল হয়।

 কিরণ কহিলেন, তোমার ডাক্তার ত সব জানে!

 শরৎ কহিলেন, জান ত, এই সময়ে মেশে নানাপ্রকার ব্যামোর প্রাদুর্ভাব হয়, অতএব আর মাস দুয়েক কাটাইয়া গেলেই ভাল হয়।

 কিরণ কহিলেন, এখানে এখন বুঝি কোথাও কাহারো কোন ব্যামো হয় না!

 পূর্ব্ব ইতিহাসটা এই। কিরণকে তাহার ঘরের এবং পাড়ার সকলেই ভালবাসে, এমন কি, শাশুড়ি পর্য্যন্ত। সেই কিরণের যখন কঠিন পীড়া হইল তখন সকলেই চিন্তিত হইয়া উঠিল— এবং ডাক্তার যখন রায়ুপরিবর্ত্তনের প্রস্তাব করিল, তখন গৃহ এবং কাজকর্ম্ম ছাড়িয়া প্রবাসে যাইতে তাহার স্বামী এবং শাশুড়ি কোন আপত্তি করিবেন না। যদিও গ্রামের বিবেচক প্রাজ্ঞ ব্যক্তি মাত্রেই, বায়ুপরিবর্ত্তনে আরোগ্যের আশা করা এবং স্ত্রীর অন্য এতটা হুলস্থূল করিয়া তোলান স্ত্রৈণতার একটা নির্লজ্জ আতিশয্য বলিয়া স্থির করিলেন এবং প্রশ্ন করিলেন, ইতিপূর্ব্বে কি কাহারও স্ত্রীর কঠিন পড়া হয় নাই, শরৎ যেখানে যাওয়া স্থির করিয়াছেন সেখানে কি মানুষরা অমর, এবং এমন কোন দেশ আছে কি যেখানে অদৃষ্টের লিপি সফল