পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
আপদ।
৭৫

নাই। একদিন নাহিতে নাহিতে হঠাৎ দেখিল তাহার বিশেষ সখের চিকনের কাজ করা জামাটি গঙ্গার জলে ভাসিয়া যাইতেছে, ভাবিল হাওয়ায় উড়িয়া গেছে, কিন্তু হাওয়াটা কোন দিক্‌ হইতে বহিল তাহা কেহ জানে না।

 একদিন সতীশকে আমোদ দিবার জন্য কিরণ নীলকান্তকে ডাকিয়া তাহাকে যাত্রার গান গাহিতে বলিলেন—নীলকান্ত নিরুত্তর হইয়া রহিল। কিরণ বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, তোর আবার কি হলরে? নীলকান্ত তাহার জবাব দিল না। কিরণ পুনশ্চ বলিলেন, সেই গানটা গা না!- সে আমি ভুলে গেছি বলিয়া নীলকান্ত চলিয়া গেল।

 অবশেষে কিরণের দেশে ফিরিবার সময় হইল। সকলেই প্রস্তুত হইতে লাগিল্‌;—সতীশও সঙ্গে যাবে। কিন্তু নীলকান্তকে কেহ কোন কথাই বলে না। সে সঙ্গে যাইবে কি থাকিবে সে প্রশ্নমাত্র কাহারও মনে উদয় হয় না।

 কিরণ নীলকান্তকে সঙ্গে লইবার প্রস্তাব করিলেন তাহাতে শ্বাশুড়ি স্বামী এবং দেবর সকলেই একবাক্যে আপত্তি করিয়া উঠিলেন, কিরণও তাঁহার সংকল্প ত্যাগ করিলেন। অবশেষে যাত্রার দুই দিন আগে ব্রাহ্মণ বালককে ডাকিয়া কিরণ তাহাকে স্নেহবাক্যে স্বদেশে যাইতে উপদেশ করিলেন।

 সে উপরি উপরি কয় দিন অবহেলার পর মিষ্টবাক্য শুনিতে পাইয়া আর থাকিতে পারিল না, একেবারে কাঁদিয়া উঠিল। কিরণেরও চোখ ছল ছল করিয়া উঠিল;—যাহাকে