পাতা:গিরীশ গ্রন্থাবলী (দ্বিতীয় ভাগ).pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্প ও প্রবন্ধ । । বালি, কিন্তু গা কিনা পাপন ব্যতীত অর্থোপার্জন হয় না, এই কথাই সাব্যস্ত হইল। “পরপীড়ন করিব ? ক্ষতি কি ?” একবার একটু ক্ষতি মনে উদয় হইয়াছিল, তাহ রহিল না। সাব্যস্ত হইল পরপীড়ন কবি। বিশ্বনাথ ঘরের দোর খোলেন না। ’ . দোর খুলিয়া দেখিলেন, ঘনঘটাবৃত রজনী, টপ, • টপ বৃষ্টি পড়িতেছে, আকাশে তারা নাই, স্বভাবে শব্দ নাই। কেবল এক একবার রোদনম্বরে সমীরণ বহিতেছে । দেখিতে দেখিতে অন্ধকার ভয়ঙ্কর বোধ হইতে লাগিল, কিন্তু তথাচবিশ্বনাথ বাহিরে যাইবেন না। এরূপ যাওয়া বিচিত্র নহে। অনাথ বা অভাগিনীর রোদনাশ্র মুছাইতে বার বার গিয়াছেম, কিন্তু আজ অন্ধকারের প্রতি লক্ষ্য হইল। মনে মনে কিঞ্চিৎ ইতস্ততঃ করিডে লাগিলেন। দেবেন্দ্রবাবুর চরমকাল উপস্থিত, তাহা তিনি জানেন । দেবেন্ত্রবাবুর অতুল ঐশ্বৰ্য্য, কিন্তু তৎসত্ত্বেও তিনি চক্ষু মুদিলে শিশু সন্তানগুলি অনাথ হইবে, কারণ, তাহার আত্মীয় কেহই নাই। দেবেন্দ্র বাবুর রুগ্নশৰ্যাগারে লোকের অভাব নাই, সকলেই দেবেন্দ্র বাবুর নিমিত্ত যে প্রাণ দিতে হইবে না, সেই প্রাণ দিবার জন্য প্রস্তুত। কেঁচা বা অঞ্চল বার বার চক্ষে উঠতেছে। কিন্তু একটী রমণী তাহার শিয়রে বসিয়া আছে, সে চক্ষু মুছিতেছে না। সৌদামিনীকে পূর্ণযৌবন বলিলেও বলা যায়, অল্পবয়সে দুট সুসস্তান হইয়াছে। সৌদামিনী পরম লজ্জাশীল, কিন্তু আজ লজ্জা নাই। মনে মনে দশবার করিয়াছেন যে, একবার বাহিরে যাইয়৷ বুঝিবে ? পতিপরায়ণ সৌদামিনী কঁাদিবার অব কাশ পান নাই। এমন সময়ে বিশ্বনাথ উপস্থিত হইলেন। ডাক্তার বাবুকে ইঙ্গিত করিয়া বাহিরে লইয়া গেলেন। কি কথা কহিলেন, পুনৰ্ব্বার ঘরে প্রবেশ করিলেন। সৌদামিনীকে জিজ্ঞাসা করিলেন,—“মা, আহার হইয়াছে ?” এ কথায় সৌদামিনীর চক্ষে জল আসিল, কিন্তু উত্তর করিতে পারিলেন না, বিশ্বনাথ কথার প্রতীক্ষা করিলেন না, বাহিরে গেলেন,সকলেই বুঝিল যে,সৌদামিনীর নিমিত্ত আহার আনিতে যাইতেছেন। কারণ, এই-- • রূপই বিশ্বনাথের কার্য্য । বিশ্বনাথ খাদ্যসামগ্ৰী লইয়া আসিলেন,নে সেই অবস্থা চিরদিন আনি । 585 তেন; কাৰ্য সমান হইল, কিন্তু সে ভাব নাই । তুমি বাহিরে বাইর যৎকিঞ্চিৎ আহার কর।” ক্ষুধা । অযুরোধে যত হ’ক বা না হ’ক, বিশ্বনাথের কথা । বিশ্বনাথ শিয়রে বসিলেন, সকলকে বলিলেন,— “ডাক্তারবাবু আমায় বলিয়াছেন, এত লোকসমাগম ভাল নয়।” সকলেই বাহিরে গেল। তখন বিশ্বনাথ ধীরে ধীরে দেবেন্দ্রের কর্ণে বলিতে লাগিলেন,-“দেবেন্দ্র বাবু, দুটা ছোট ছোট ছেলে, উইল করিলে ভাল হয়।” দেবেন্দ্র উত্তর করিলেন,— "বিশ্বনাথ বাবু, আমার কি এমন অবস্থা, তবে কেন সৌদামিনী বলে, আমি বঁচিব ?” বিশ্বনাথ প্রত্যুত্তর দিলেন,-“আমি তা বলিতেছি না, কিন্তু সকল অবস্থাতেই লোকের উইল করা ভাল।” দেবেন্দ্র বলিলেন,—“বুঝিলাম,কিন্তু সৌদামিনী যেন এ কথা না শুনে ৷” । বিশ্বনাথ বলিলেন,– “গুনা আবশ্যক। কারণ তিনি ব্যতীত অছি হইবার জন্য কাহাকেও দেখি । না। অছির সকল বৃত্তান্ত জানা আবশ্যক। । দেবেন্দ্র বাবু বলিলেন,—“কেন, মহাশয় স্ত্র হউন না ?” বিশ্বনাথ উত্তর করিলেন,-“আমার ইচ্ছাব কিন্তু ভয় পাই, পাচ জনে কি বলবে।” দে। পাঁচজনে যাহাই বলুক, কিন্তু আপনাকে ইহা স্বীকার পাইতে হইবে। সৌদামিনী ছেলে মানুষ, আমার সন্তানগুলির আর উপায় দেখি না। বি। ভাল, ঝঞ্ঝাট বাড়িবে, কি করিব ? আমি शैक्नुऊ । --- দেবেন্দ্রের মৃত্যু হইল। সৌদামিনী তিন দিবস । কাদিলেন। কোলের ছেলেট একদিন মার কান্নায় কাদিয়াছিল, আর দুই দিন কঁদে নাই। । দাসী দুধ দিয়াছে,তাই খাইয়া পাশে বসিয়া আছে। । কি জানি কেন ভরসা করিল, সৌদামিনীকে ‘মা । বলিয়া ডাকিল। সৌদামিনী উঠিলেন, হাবাকে কোলে লইয়। বলিলেন,—“আমার নীরদ কোথা ?” নীরদের মার কাছে আসিতেও লজ্জা হইয়াছিল, কিন্তু আসিল । হাবাকে কোলে লইলেন, নীরদকে চুম্বন করিলেন মাত্র। দাস-দাসীর অভাব নাই, তথাপি গৃহ জনশূন্ত। এমন সময়ে একজন দাসী সঙ্গে করিয়া বিশ্বনাথ উপস্থিত হইলেন। বলিলেন, "মাগে, গৃহিনী পীড়িত, হরমণিকে পাঠাই দি ।