পাতা:গীতবিতান.djvu/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯২
পূজা

বিশ্বপরিবার তোমার ফেরে সুখে আকাশে,
তোমার ক্রোড় প্রসারিত ব্যোমে ব্যোমে।
আমি দীন সন্তান আছি সেই তব আশ্রয়ে
তব স্নেহমুখপানে চাহি চিরদিন॥

৪৮৬

সকল ভয়ের ভয় যে তারে কোন্ বিপদে কাড়বে?
প্রাণের সঙ্গে যে প্রাণ গাঁথা কোন্ কালে সে ছাড়বে?
নাহয় গেল সবই ভেসে রইবে তো সেই সর্বনেশে,
যে লাভ সকল ক্ষতির শেষে সে লাভ কেবল বাড়বে॥
সুখ নিয়ে, ভাই, ভয়ে থাকি, আছে আছে দেয় সে ফাঁকি—
দুঃখে যে সুখ থাকে বাকি কেই বা সে সুখ নাড়বে?
যে পড়েছে পড়ার শেষে ঠাঁই পেয়েছে তলায় এসে,
ভয় মিটেছে, বেঁচেছে সে— তারে কে আর পাড়বে?

৪৮৭

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে।
হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে, হৃদয়ে রয়েছ গোপনে॥
বাসনার বশে মন অবিরত ধায় দশ দিশে পাগলের মতো,
স্থির-আঁখি তুমি মরমে সতত জাগিছ শয়নে স্বপনে॥
সবাই ছেড়েছে, নাই যার কেহ, তুমি আছ তার আছে তব স্নেহ—
নিরাশ্রয় জন, পথ যার গেহ, সেও আছে তব ভবনে।
তুমি ছাড়া কেহ সাথি নাই আর, সমুখে, অনন্ত জীবনবিস্তার—
কালপারাবার করিতেছ পার কেহ নাহি জানে কেমনে॥
জানি শুধু তুমি আছ তাই আছি, তুমি প্রাণময় তাই আমি বাঁচি,
যত পাই তোমায় আরো তত যাচি, যত জানি তত জানি নে।
জানি আমি তোমায় পাব নিরন্তর লোকলোকান্তরে যুগযুগান্তর—
তুমি আর আমি মাঝে কেহ নাই, কোনো বাধা নাই ভুবনে॥