পাতা:গীতবিতান বার্ষিকী (মাঘ, ১৩৫০).pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গীতবিতান বার্ষিকী১৩৫০ কলকাতা তখন ছিল এক রকম সঙ্গীতহীনা-—-অস্তুত: আমার পক্ষে। কিন্তু বোধহয় সমস্ত কলকাতার বিষয় একথা বলা অত্যায়। কারণ খামি শুধু ছাত্রসমাজই জানতুম, অন্ত্য কোন সমাজ জানতুম না । পরের বৎসর আমি ইস্কুল ছেড়ে যখন প্রেসিডেন্দি-কলেজে ভর্তি হলুম, তখন একটি ছোকরার সঙ্গে আলাপ হল, তার নাম জ্ঞানদাপ্রসন্ন মুখুয্যে। তার ছিল বিরাট শরীর, আর শুনলুষ সে খুব ভাল সেতার বাজায়। পরে তার অপূর্ব সুরবাহার বাজানো শুনেছি। ইনিই সেই স্বনামধ্য গোবরডাঙ্গার জমিদার জ্ঞানদাপ্রসন্ন, যিনি কালক্রমে বাঙ্গলার অদ্বিতীয় সৌথীন সুরবাহারী হয়ে ওঠেন । এবং এই সময়েই আমার লালচাদ বড়ালের সঙ্গে পরিচয় হয়। লালচাদ আমার সহপাঠী ছিলেন না। আমি যখন প্রেসিডেন্সি-কলেজে ফাষ্ট-ইয়ারে পড়ি, তখন তিনি হিন্দু ইস্কুলে ফোর্থ-ক্লাসে পড়তেন, যদিচ তিনি বয়সে আযার চাইতে বড় ছিলেন। তিনি ছিলেন যথার্থ সঙ্গীতপ্রিয়। তিনি হারমোনিয়ম বাজাতেন, এস্রাজ বাজাতেন, বায়াতবলা বাজাতেন এবং গান গাইতেন। তার কণ্ঠস্বর ছিল বেজায় হেঁড়ে, আর গাইতেন বেশির ভাগ রামমোহন রায়ের রচিত গান। তার ঠাকুরদাদ প্রেমৰ্চাদ ব ডাল আদি-ব্রাহ্মসমাজের ব্রাক্ষ ছিলেন । এবং তার বাড়িতে প্রতিভায় উপাসনা হত, তা'তে লালচাদ গান করতেন। আমি প্রায় প্রত্যহই সন্ধ্যার সময় লালচাদের বাঙী যেgম ও ঘন্টাখানেক সেখানে কাটিয়ে বাড়ী ফিরে আসতুম। তার সেইবয়স থেকেই ভাল ভাল গাইয়ে বাজিয়ের বাড়ীতে যাওয়া অভ্যাস ছিল। মহে চাটুয্যে নামক জনৈক ওস্তাদ হারমোনিয়ম বাজিয়ের বাড়ীতে আমি লালচাদের সঙ্গে যাই । এবং সেখানে ছোটে-টু দিখা-নামক ওস্তাদের গান শুনি । এই মহেন্দ্র চাটুয্যে ছিলেন পাইকপাড়ার রাজা ইন্দ্ৰসিংহের একটি প্রিয়পাত্র। পরে তিনি নোট জাল করে’ আদাযানে যান। তিনি আন্দামান থেকে ফিরে আসবার পরও আমি একদিন তার বাজনা শুনি। কিন্তু তিনি তার গুণপনা আন্দামানেই রেখে এসেছিলেন। লালচাদের সঙ্গে আমি আরও অনেক গাইয়ে-বাজিয়ের বাড়ীতে যাই। কখনো খাপ ব্লার ঘরে কোন দরিদ্র ব্রাহ্মণের বাসায় যাই ; তিনি গুণী হতে পারেন, কিন্তু সে-জঘ্য খাপ রার ঘর আমার সহ হল না। একবার তার সঙ্গে আমি প্রমথ বাড়য্যে নামক একটি যুবকের বাড়ী যাই তার বেয়ালা গুনতে । তিনি ছিলেন অতি সুদর্শন ও মিষ্টভাষী। পরে উক্ত-নামের একটি ব্যক্তি সঙ্গীত-শিক্ষক-হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। এ-দুই লোক একই ব্যক্তি কিনা, পে-বিষয় আমার সন্দেহ আছে। লে যাই হোক, সেকালে রবীন্দ্রনাথের কোন গান কারও মুখে শুনিনি। বছরতিনেক কলকাতায় থেকে আমি আবার কৃষ্ণনগর ফিরে যাই। কৃষ্ণনগর আমার তাল লাগেনি,—দীর অভাবে। পূর্বে যারা আমার সহপাঠী ছিল, তার প্রায় সকলেই কলকাতা চলে গিয়েছিল। তারপর একদিন এক ভদ্রলোকের বাড়ী নিমন্ত্রণ খেতে গিয়ে সত্য লাহিড়ী নামক দাদার সহপাঠ একটি যুবকের গান শুনি। তিনি বাঙ্গালায় একটি