পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

দেখিয়া কিশোরীর ঘুমের ঘোর ছুটয়া পলাইল, সে স্তম্ভিত হইয়া বৃদ্ধের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। বৃদ্ধ জিজ্ঞাসা করিল—“ছোটবাবু বিজয়া কোথায়?” কিশোরী বিস্মিত হইয়া বলিল,—“বিজয়া! বিজয়া কোথায়।” বৃদ্ধ উত্তেজিত হইয়া বলিল—“বিজয়া কোথায় তা তুমিই জান, ছোটবাবু,— বিজয়া কোথায়?” কিশোর বিরক্ত হইয়া উত্তর করিল,—“তা আমি কি জানি!” জয়চাঁদ বলিল—“জান না?” কিশোরী উত্তর করিল “না।” তাহার মুখের কথা শেষ হইবার পূর্বেই বৃদ্ধ ক্ষুধিত ব্যাঘ্র্যের ন্যায় লম্ফ দিয়া তাহার উপরে পড়িল, সুদীর্ঘ ছুরিকা তাহার দেহ ভেদ করিয়া পিঠের দিকে বাহির হইয়া পড়িল। কিশোরীর দেহ শয্যায় লুটাইয়া পড়িল। জয়চাঁদ ছোরখানা বাহির করিয়া লইয়া ঘরের বাহিরে আসিল।

 বৃদ্ধ বদনচৌধুরী অতি প্রত্যুষে শয্যাত্যাগ করিতেন। দশমীর দিনে ঝড়জলে লোকজন উঠিবে না, ভাবিয়া স্বয়ং তাহাদিগকে জাগাইতে আসিতেছিলেন। জয়চাঁদ যখন কিশোরীকে হত্যা করিয়া গৃহের বাহিরে আসিতেছে, ঠিক সেই মুহূর্ত্তে তিনি উঠানে পা দিয়াছেন। তাঁহাকে দেখিয়া জয়চাঁদ দূর হইতে বলিল,—“বাবু, দাঁড়ান।” তাহার বজ্র-গম্ভীর কণ্ঠস্বর শুনিয়া বৃদ্ধ স্তম্ভিত হইয়া দাঁড়াইলেন। তাহার রক্তাক্ত দেহ ও হাতের ছোরা দেখিয়া বৃদ্ধের অন্তরাত্মা শুকাইয়া গেল। জয়চাঁদ তাঁহার নিকটে আসিয়া বলিল,—“তোমার কোন ভয় নাই, বাবু। অনেক দিন তোমার রাজ্যে নির্ভয়ে বাস করেছি, কিন্তু তোমার ছেলে হ’তে জয়চাঁদের জাত গেল। তাই তোমায় নির্ব্বংশ করে আস্‌ছি।” এই বলিয়া বৃদ্ধ ছোরা নিজের বুকে বসাইয়া দিল, তাহার দেহ চৌধুরী মহাশয়ের পদতলে লুষ্ঠিত হইয়া পড়িল।

১১২