পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

 বহুকালপরে সুরমা দৌলতপুরে আসিয়াছে, তাহার পিতা মাতা কাশীযাত্রা করিবেন, সেই জন্য একবার দেখা দিতে আসিয়াছে। সুরমা আসিয়া শুনিয়াছে যে সদাশিব মিত্র ও তাঁহার পত্নী গঙ্গালাভ করিয়াছে, মণিলালদের বাড়ীতে আর কেহই নাই, সে নিজে কলিকাতায় থাকে, ভুলিয়াও দেশে আসে না। একদিন সন্ধ্যার পূর্ব্বে পাড়ায় বেড়াইতে গিয়া সুরমা মণিলালদের বাড়ীখানি দেখিয়া আসিয়াছে, দেখিয়া নিজের অজ্ঞাতসারে একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া আসিয়াছে। এই সেদিন সে সদাশিব মিত্রের কোলাহলপূর্ণ অট্টালিকায় সুখের সংসার দেখিয়া গিয়াছে, আর আজি দুইদিন পরে সেখানে মহাশ্মশান।

 প্রবোধ বাবু যেদিন কাশীযাত্রা করিবেন, সেই দিন প্রভাতে সুরমা একটি দাসী সঙ্গে লইয়া গঙ্গাস্নান করিতে চলিয়াছে। তাহার শ্বশুরালয় হইতে গঙ্গা বহুদূর, সেই জন্যও বটে, আর জন্মের মত শৈশবের লীলাক্ষেত্র, বাল্যের কৈশোরের সুমধুর স্মৃতি-বিজড়িত স্থানগুলি দেখিবার জন্যও বটে, সুরমা পুরাতন বাঁধা ঘাটে স্নান করিতে যাইতেছিল। ঘাটের অবস্থা ক্রমশঃ অতি শোচনীয় হইয়া উঠিয়াছে, চাতাল ও রাণাগুলি ভাঙ্গিয়া গিয়াছে, তাহা কেহই সংস্কার করিয়া দেয় না। ঘাটের ধাপগুলি কাদায় ভরিয়া গিয়াছে, গঙ্গার জলও অনেকদূর সরিয়া গিয়াছে, এখন বর্ষার সময়েও ঘাটে জল আসে না, ঘাটের অবস্থা দেখিয়া সুরমার চোখে জল আসিল। গ্রামের লোক এখন আর ঘাট ব্যবহার করে না; স্নান করিতে আসিয়া ঘাটের পাশ দিয়া চলিয়া যায়, সুরমা গ্রামের পথ ছাড়িয়া ভাল করিয়া দেখিবার জন্য ঘাটের উপর উঠিল। সে দেখিল যে সকলের নীচের ধাপে একজন সুসজ্জিত পুরুষ বসিয়া আছে।

১২২