পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

 জ্ঞান হইলে চাহিয়া দেখিলাম রৌদ্র উঠিয়াছে, সুরেন আমার পার্শ্বে বসিয়া আছে, তাহার সিক্ত বসন রক্তাক্ত, শতধা ছিন্ন, সে তাহা গ্রন্থি দিয়া পরিধান করিয়াছে। উঠিয়া বসিলাম। লীলার কথা মনে পড়িয়া গেল। তাহার যাতনাক্লিষ্ট পাণ্ডুর মুখখানি মনে পড়িয়া গেল, তাহার শেষ বিদায়ের কথাগুলি মনে পড়িল, অবশেষে যে কঠিন শয্যায় তাহাকে শয়ন করাইয়া, তাহার শীর্ণ ওষ্ঠ দুটিতে প্রজ্বলিত অগ্নি প্রদান করিয়াছিলাম সে কথা মনে পড়িল, তাহার ক্ষুদ্র জীবন অবসান হইলেও সে যে আমাকে বিস্তৃত হয় নাই, আসন্ন মরণ হইতে আমাকে উদ্ধার করিয়া সে যে আমাকে ডাকিতে আসিয়াছিল, সে কথা মনে পড়িল। তখন আর স্থির থাকিতে পারিলাম না; সহস্র সহস্র বৃশ্চিক যেন আমায় দংশন করিতেছিল, হঠাৎ যেন দিগন্ত রক্তবর্ণ হইয়া উঠিল, দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হইয়া ছুটিলাম। দেখিলাম কিয়দ্দূরে মুখোপাধ্যায়ের দেহ তরঙ্গাঘাতে ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত হইতেছে। নুটবিহারী পিতার বিশ্বস্ত কর্ম্মচারী, সে মরণেও বিশ্বাসঘাতক হয় নাই, তখনও তাহার প্রাণহীন দেহ অলঙ্কারের বাক্স আকর্ষণ করিয়া ভাসিতেছিল। নুটবিহারী আমাকে বড় ভালবাসিত, শৈশবে আমাকে কোলেপিঠে করিয়া মানুষ করিয়াছিল, আমিও তাহাকে বড় ভালবাসিতাম। একবার ভাবিলাম সে হয় ত বাঁচিয়া আছে, তাহাকে চেতন করিবার চেষ্টা করি, কিন্তু তাহা পারিলাম না। চারিদিক আবার লাল হইয়া উঠিল, আমার শীর জ্বলিয়া উঠিল, দুটিয়া পলাইয়া গেলাম। কোথায় দিয়া কোন্‌ দিকে যাইতেছিলাম মনে নাই। অকস্মাৎ দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়া আসিল, সূর্য্যের তেজ তখন প্রখর হইয়া উঠিয়াছে। দূরে উত্তপ্ত