পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভবিতব্য

 জেট হইতে একটু দূরে ছিল, আর আমি একরাশ মোটা কাছির উপরে বসিয়া একদৃষ্টে জাহাজ দেখিতেছিলাম। জাহাজখানি ছোট, তাহার নামটা এখনও মনে আছে, তাহার পশ্চাতে বড় বড় মোটা ইংরাজী অক্ষরে লেখাছিল, “হাকাতা মারু, নাগাসাকি।” জাহাজের উপর সারি সারি জাপানী নাবিক দাঁড়াইয়াছিল। তাহাদিগকে দেখিলে ইংরাজ বলিয়া ভুল হয়। তাহাদিগের কাপ্তেনও জাপানী। যখন জাহাজখানা জেটী হইতে দশহাত কি পনর হাত তফাৎ আছে, তখন জাহাজের প্রথম শ্রেণীর একটি কামরা হইতে তিনচার বৎসরের একটি শিশু বাহির হইয়া আসিয়া বারান্দায় দাঁড়াইল, তাহার সঙ্গে সঙ্গেই একটি বাঙ্গালী বালিকাও কামরা হইতে বাহির হইয়া আসিল। জাহাজ লাগিবে বলিয়া খালাসীরা রেলিং খুলিয়া লইতেছিল, বালক আসিয়া যেখানে দাঁড়াইল, সেখানকার রেলিং চিল-হইয়াছিল, বালক ভর দিবামাত্র রেলিং খুলিয়া জলে পড়িয়া গেল, ঝোঁক সামলাইতে না পারিয়া বালকও গঙ্গার জলে পড়িয়া গেল। বালককে জলে পড়িতে দেখিয়া বালিকা চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিল “মা খোকা?” তাহার শেষকথাগুলি শোনা গেলন। কারণ সেও সেইসঙ্গে জলে ঝাঁপাইয়া পড়িল। বালককে জলে পড়িতে দেখিয়া আমিও তাহার উদ্ধারের জন্য জলে লাফাইয়া পড়িয়াছিলাম। কিন্তু আমার পূর্ব্বেই বালিকা ঝাঁপাইয়া পড়িয়াছিল। আমি জলে পড়িয়াই ডুব দিলাম। আমি ডুবিবার পূর্ব্বে জলে আর একটা গুরুভার দ্রব্যের পতন শব্দ শুনিতে পাইলাম। এক মুহূর্ত্ত পরেই কাহার কাপড় আমার হাতে ঠেকিল, টানিয়া দেখিলাম কাপড় খোলা। গঙ্গার মৃত্তিকা স্পর্শ করিয়াই বালকের দেহ পাইলাম। জলে পড়িয়া বালক তলাইয়া

১৩৩