পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভবিতব্য।



তিন দিনের দিন সতীশের বাড়ী হইতে বাহির হইয়া পড়িলাম। রসময় বাবুর বাড়ীর সন্মুখে গিয়া দেখি বাড়ী নিস্তব্ধ, যেন লোক জন কেহ নাই। কি জানি কেন মনটা কেমন হইয়াগেল, কম্পিত পদে বাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করিলাম। নিম্নতলে কেহ ছিলনা, দ্বিতলৈ উঠিয়া দেখি রসময় বাবু স্নান মুখে বসিয়া আছেন। এই কয়দিনের মধ্যে তিনি যেন বৃদ্ধ হইয়া পড়িয়াছেন, তাঁহার বয়স যেন দশ বৎসর বাড়িয়াছে। তিনি আমাকে দেখিয়া ছুটিয়া আসিলেন, আমার গলা জড়াইয়া কাঁদিয়া ফেলিলেন, বলিলেন “বাবা, একবার তুমি মিনুকে বাঁচাইয়াছিলে, আমি কপালের দোষে আবার তাহাকে হারাইতে বসিয়াছি, তুমি তাহাকে বাঁচাও।” আমি অনেক কষ্টে বৃদ্ধকে সান্ত্বনা দান করিয়া মৃণালিনীকে দেখিতে চলিলাম যে ঘরে আমার চেতনা ফিরিয়াছিল সেই ঘরে প্রবেশ করিয়া দেখিলাম, সেই খাটের উপরে শুষ্ক মৃণালের ন্যায় মৃণালিনী পড়িয়া আছে। তাহার মাথা মুড়াইয়া দেওয়া হইয়াছে, তারার মাতা শিয়রে বসিয়া, মাথায় বরফ দিতেছেন, আর অশ্রু বিসর্জ্জন করিতেছেন। মিনু বড়ই ছট ফট করিতেছিল। আমি তাহার নিকটে গিয়া বসিলাম। মিনু মাঝে মাঝে অনুচ্চ স্বরে কি বলিতেছিল। আমি তাহার পাশে বসিয়া তাহার গায়ে হাত বুলাইতে লাগিলাম। শুনিলাম ডাক্তার আসিয়া বলিয়া গিয়াছে যে, তাহার মস্তিষ্কের জ্বর হইয়াছে, জীবনের আশা অতি সামান্য, তবে যদি কোন উপায়ে দুই এক দিন বাঁচাইয়া রাখা যায়, তাহা হইলে রোগিণী রক্ষা পাইলেও পাইতে পারে।

 আমি আসিবার পর হইতে তাহার অবস্থার উন্নতি হইতে লাগিল। এইরূপে দুইদিন কাটা গেল, ডাক্তার আসিয়া যখন বলিয়া গেল আর

১৩৯