পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সোণার বালা।

 মেয়ের মার কোন আপত্তিই টিকিল না, মহা ধূমধামে নিরুর বিবাহ হইয়াগেল, নিরু শ্বশুরালয়ে চলিয়াগেল। বউ বড় হইয়াছে; বাপের বাড়ী থাকিলে ছেলের ঘরে মন বসিবে না, এই অছিলা করিয়া নিরুর শ্বাশুড়ী দ্বিরাগমনের পরে তাহাকে আর পিত্রালয়ে যাইতে দিলেন না। নিরুর পিতা দুই একবার লইয়া যাইতে আসিয়াছিলেন কিন্তু বৈবাহিকার নিকট কটুকথা শুনিয়া ভগ্নহৃদয়ে গৃহে ফিরিয়াছিলেন। তাঁহার বৈবাহিক বলিতেন যে “জগৎপুরের রাজবাড়ীর বধূকে কেহ কখনও পিত্রালয়ে যাইতে দেখে নাই।” যৌবনোদগমে নিরুপমার বিবাহ হইয়াছিল, বিবাহের জল গায়ে লাগিয়া পূর্ণবিকশিত চম্পক কলিকার ন্যায় তাহার রূপ ফুটিয়া উঠিল। কিন্তু তাহার অনিন্দ্যসুন্দরকান্তি যাহার অধিকারে আসিয়াছিল, সে তাহার দিকে ফিরিয়াও চাহিত না। শ্বশুর-শ্বাশুড়ী যতদিন বাঁচিয়া ছিলেন, ততদিন নিরুপমা বিশেষ কোনও অভাব বুঝিতে পারেনাই। স্বামীকে সে বড় ভয় করিত,সুতরাং তাঁহার নিকটে যাইতনা। শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর সেবা করিয়া তাহার দিন কাটিত। শ্বাশুড়ী সময়ে সময়ে দুঃখ করিয়া বলিতেন “পোড়াকপালীর রূপ যেন উছলিয়া পড়িতেছে। আহা আর জন্মে কি পাপ করিয়াছিল যে তাহার ফলে ছেলের মনের মত হইল না।” নিরুপমা সে সব বড় বুঝিতন, কেবল পিত্রালয়ে যাইবার জন্য তাহার প্রাণ মধ্যে মধ্যে ব্যাকুল হইয়া উঠিত।

 জগৎ পুরের রাজপুত্রের নাম শ্যামাদাস। তিনি বাল্যকাল হইতে শিক্ষার জন্য কলিকাতায় থাকিতেন, ছুটির সময় বাড়ীতে আসিতেন। কুমার শ্যামাদাস উচ্চশিক্ষিত। ধনী সন্তানের সচরাচর যাহা হয়না, কুমারের তাহাই হইয়াছিল, তিনি সুশিক্ষিত হইয়াছিলেন। স্কুলে কলেজে

১৪৩