পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

শিক্ষা শেষ হইলেও তিনি লেখাপড়ার চর্চ্চা পরিত্যাগ করেন নাই এবং সেই ওজর করিয়া তিনি বাড়ীতে থাকিতে চাহিতেন না। তাঁহার পিতা মাতা বহু চেষ্টা করিয়াও তাঁহাকে গৃহে রাখিতে পারেন নাই। পুত্রের চরিত্র দোষ ছিলনা বলিয়া পিতা পুত্রের কলিকাতায় থাকা সম্বন্ধে বিশেষ আপত্তি করিতেন না,তিনি ভাবিয়াছিলেন কালে সমস্তই ঠিক হইয়া যাইবে। কিন্তু তাহার বহুপূর্ব্বেই কালপ্রাপ্ত দেখিয়া কাল আসিয়া তাঁহাদিগকে লইয়া গেল। শ্বশুর মরিলেও নিরুপমা বিশেষ অভাব বোধ করে নাই, কিন্তু শ্বাশুড়ী মরিলে সে অকূল পাথরে পড়িল, কারণ সে তখন বৃহৎ রাজসংসারের কর্ত্রী হইয়া উঠিল, তখন সে দেখিল যে তাহার বিষম বিপদ। যাঁহার বিষয় যাঁহার সম্পত্তি, তিনি কলিকাতায় থাকেন, দেশে সকলে তাহারই মুখাপেক্ষী হইয়া থাকে। দেবতার সেবা, ক্রিয়াকর্ম্ম সকল বিষয়ে, সকলেই তাহার হুকুম লইতে আসে। সে মহাবিপদে পড়িয়া যায়। ভিক্ষুক আসিয়া ভিক্ষ চায়, কন্যাদায়গ্রস্ত ব্রাহ্মণ আসিয়া সাহায্য প্রার্থনা করে, দেওয়ান আসিয়া বলে “মহারাণীর কি হুকুম?” নিরুপমা ভাবে আমি কে? ইহারা আমাকে কেন জ্বালাতন করিতে আসে? উত্তর না পাইয়া দেওয়ান ফিরিয়া যাইত; ভিখারী, আর্ত্ত, দরিদ্র বিফল হইয়া চলিয়া যাইত নিরুপমা কোন কথাই বলে না।

 যাঁহার ঘর বাড়ী, যাঁহার বিষয় সম্পত্তি, তিনি চাহিয়াও দেখেন না। নিরুপমা ভাবিয়া কুল পাইল না। গতিক সুবিধা নয় দেখিয়া পুরাতন দেওয়ান অবসর চাহিল। রাজা কলিকাতা হইতে টাকা চাহিয়া পাঠাইলে দেওয়ান জবাব দিল; বলিয়া পাঠাইল, সে বৃদ্ধ হইয়াছে, কার্য্যে অক্ষম। তখন বাধ্য হইয়া নিরুপমার স্বামীকে দেশে ফিরিতে হইল, স্বামী আসিলে

১৪৪