পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বশীকরণ।

তাঁহাকে আকুল করিয়া তুলিয়াছিল। পুলিনের মাতা সর্ব্বদা চোখের জলে ভাসিতেন, তাঁহার দশা দেখিয়া পুলিনের পিতা আরও চিন্তিত হইয়া পড়িলেন।

 গ্রীষ্মাবকাশে পুলিন কর্ম্মস্থান হইতে গৃহে ফিরিল, তখন তাহার পিতামাতা তাহাকে ধরিয়া পড়িলেন। পুলিন মাতার চোখের জল গ্রাহ্য করে নাই; কিন্তু পিতার সনির্ব্বন্ধ অনুরোধ এড়াইতে পারিলনা। তিনি যখন কাতর কণ্ঠে প্রাচীন বংশ লোপ ও পিতৃ-পিতামহের পিণ্ডলোপের আশু সম্ভাবনা জানাইলেন, তখন পুলিন নীরবে শুনিয়া গেল। তাহার মনে যাহাই থাকুক না কেন, প্রকাশ্যে সে কোন আপত্তি করিতে পারিল না। পুলিন বিবাহ করিবে এই সংবাদ নক্ষত্রবেগে বঙ্গদেশ ছাইয়া ফেলিল, নানাদেশ হইতে চিরকুমার সভার ভূতপূর্ব্ব সভ্যগণ উপহার পাঠাইতে লাগিল। পুলিনের কিন্তু অনুতাপ বা লজ্জার চিহ্নমাত্র দেখা গেল না। সে ঠিক করিয়া রাখিয়াছিল যে সে পিতার আদেশ পালন করিবে বটে, কিন্তু তথাপি জগতের আদর্শ হইয়া থাকিবে। সে বিবাহ করিবে কিন্তু স্ত্রীর মুখ দর্শন করিবেনা।

 মহাসমারোহে কলিকাতায় পুলিনের বিবাহ লইয়া গেল। প্রবোধ, নরেশ প্রভৃতি পুলিনের ভূতপূর্ব্ব সহচরগণ একত্র হইয়া মহা আনন্দ করিতে লাগিল; কেহ বলিল এতদিনে মহাপুরুষের পতন হইল; কেহ বলিল কন্য-কর্ত্তাদের উৎপাতে বাঙ্গালা দেশে আর সাধু পুরুষ রহিল না; কেহ বলিল পুলিন দেওয়ালে লিখিয়া রাখিয়াছিল যে এইবার ডাকিলেই যাইব। প্রবোধের স্ত্রী বলিয়া পাঠাইলেন যে, মহাপুরুষদিগকে তাঁহার পূর্ব্ব হইতেই জানাছিল, তবে কেহ বা দুদিন আগে, কেহবা দুদিন

১৫৭