পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

“লীলা!” ফিরিয়া-দেখিলাম ছায়ার ন্যায় সুরেন আমার পশ্চাতে আসিতেছে।

 প্রবেশিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া যখন কলিকাতায় পড়িতে গিয়াছিলাম তখন হইতেই সঙ্কল্প করিয়া গিয়াছিলাম যে নিজে না দেখিয়া বিবাহ করিব না। পিতা আমার বিবাহ দিবার অনেক চেষ্টা করিয়া ছিলেন, কিন্তু আমার মত না থাকায় বিবাহ হইয়া উঠে নাই। ক্রমে একে একে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা-সমুদ্র অনায়াসে উত্তীর্ণ হইয়া গেলাম, বিবাহের বাজারে আমার দর বাড়িল, অনেক কন্যাভারগ্রস্ত আমার হাতে ধরিয়া অনুরোধ করিয়া কাঁদিয়া কাটিয়া গেল, কিন্তু কিছুতেই আমার মন টলিল না। অবশেষে সুরেনই আমার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করিল। কথার ছলে আমার অন্তরে লুক্কারিত প্রতিজ্ঞা বাহির করিয়া লইয়া আমাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করিল। কলিকাতার মেসে থাকি-কলেজে পড়ি, আত্মীয় স্বজনের অত্যন্ত অভাব, এই অবস্থায় হঠাৎ একদিন মধ্যাহ্ন-ভোজনের নিমন্ত্রণ পাইয়া অত্যন্ত আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া গেলাম। নিমন্ত্রণকর্তা আমার সম্পূর্ণ অপরিচিত। সুরেন বলিল, তিনি তাহার আত্মীয়। পরে শুনিয়াছিলাম সুরেনের বংশে কেহ কখনও তাহার নামও শুনে নাই। আহারের সময় মলিন বস্ত্র-পরিহিতা একটি বালিকা আসিয়া অত্যন্ত সঙ্কুচিত ভাবে আমাদিগকে পরিবেশন করিয়া গেল। মেসে ফিরির সুরেন আমাকে জিজ্ঞাসা করিল “মেয়েটী কেমন?” আমি সংক্ষেপে উত্তর করিলাম “মন্দ নয়।” এক সপ্তাহ পরে শুনিলাম আমার বিবাহ। সুরেন এমন ভাবে সুবন্দোবস্ত করিয়াছিল যে আর আপত্তি করিবার সুবিধা পাইলাম না।