পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাগলের কথা।

বসন্তোৎসবের দিনে মহাসমারোহে লীলাকে বিবাহ করিয়া ঘরে আনিলাম। বড়ই সুখে বিবাহিত জীবনের তিন বৎসর কাটিয়াছিল, এখনও সে কথা মনে করিলে স্বপ্নের মত বোধ হয়। লীলাকে দেখিলে যুথিবন বলিয়া ভ্রম হইত। ভাবিতাম স্পর্শ করিলেই ঝরিয়া পড়িয়া যাইবে। যাহা ভয় করিয়াছিলাম তাহাই হইল, প্রথম প্রসব-বেদনা সহ্য করিতে না পারিয়া আমার যুথিবন সত্য সত্যই ঝরিয়া গেল। যাইবার সময় সে বলিয়া গেল “আমি তোমার কাছে থাকিতে পারিলাম না, তুমি কিন্তু আমার ভুলিও না।” আমার বাক্যস্ফূর্ত্তি হইবার পূর্ব্বে সে চলিয়া গেল।

 এই তিন বৎসরের মধ্যে আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া উকিল হইয়াছিলাম, লীলার সহিত আশা ভরসা সমস্তই বিসর্জ্জন দিয়াছিলাম, সুতরাং ব্যবসায়ে উন্নতি করিতে পারিলাম না। কিছুদিন পরে পুনরায় বিবাহের জন্য প্রস্তাব আসিতে লাগিল, আমার উপর রীতিমত উৎপীড়ন আরম্ভ হইল। এইরূপে দুই বৎসর কাটিয়া গেল। পিতার কাতরতা, মাতার অশ্রুজল, ভ্রাতৃবধূগণের সবিনয় অনুরোধ এড়াইতে না পারিয়া বিবাহ করিতে স্বীকার করিলাম। যে দিন মাতার নিকট বিবাহ করিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হইলাম সেই দিন রাত্রিকালে লীলার শয়নকক্ষে একাকী শুইয়াছিলাম। মহানগরীর কলরব তখন থামিয়া আসিয়াছে, কৃষ্ণপক্ষের মধ্যভাগে নিশীথে ক্ষীণচন্দ্রালোক দেখা দিয়াছে, গ্রীষ্মকাল, গৃহের দরজা-জানালাগুলি খোলা রহিয়াছে। কোথা হইতে একটা দমক বাতাস আসিয়া দীপ নিবাইয়া দিয়া গেল, সেই সময় দূরে কে যেন হা-হা-হা করিয়া উচ্চহাস্য করিয়া উঠিল, আমি শিহরিয়া