পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

অত্যন্ত কাদা হইয়াছে। তথাপি যাত্রা করাই স্থির করিলাম। অপরাহ্লে বাক্স ও বিছানাটী এক্কায় চাপাইয়া রসুলপুর হইতে রওনা হইলাম।

 আমি ভাবিয়ছিলাম যে রসুলপুর হইতে চারি পাঁচ ক্রোশ দূরে সলিমাবাদের চটীতে আশ্রয় লইব; কিন্তু দুই ক্রোশ পথ অতিক্রম করিতে না করিতে কাল মেঘে আকাশ ছাইয়া গেল, ভীষণ ঝড় আরম্ভ হইল, তাহার সহিত মূষলধারে বৃষ্টি পড়িতে লাগিল। এক্কা তখনও ধীরে ধীরে চলিতেছিল, কিন্তু অন্ধকার ক্রমে ঘন হইয়া আসিল, পথ আর দেখা যায় না। কিয়ংক্ষণ পরে আমার সারথি জিজ্ঞাসা করিল “বাবুজি, কিছুই ত দেখিতে পাইতেছি না। কি করিব?” আমি বলিলাম “এখানে দাঁড়াইয়া থাকিলে ত শীতে মরিতে হইবে; ঘোড়ার রাশ ঢিল করিয়া দাও, সে নিজেই অন্ধকারে পথ দেখিয়া চলিবে। ধীরে ধীরে চলিলে কোনও সময়ে চটীতে পৌঁছিতে পারিব।” এক্কাচালক তাহাই করিল। অশ্ব ধীরে ধীরে মন্থর গতিতে চলিতে লাগিল। মধ্যে মধ্যে বিদ্যুতালোকে দেখিতে পাইলাম চারিদিকে জল; যত দূর দৃষ্টি যায় জল ব্যতীত আর কিছুই দেখা যায় না; নদীনালা জলে ভরিয়া গিয়াছে, মানুষের আবাসের চিহ্নমাত্রও নাই। মনে বড় ভয় হইল, এক্কা-চালককে জিজ্ঞাসা করিলাম “বাপু, তুমি পথ চিনিতে পারিতেছ ত?” উত্তরে সে আমাকে বুঝাইয়া দিল যে সে পুরুষানুক্রমে এক্কা চালাইয়া আসিতেছে এবং হাজার বার এই পথে গিয়াছে, ইহা অপেক্ষা অধিক দুর্য্যোগেও কখনও পথ হারায় নাই। কি জানি কেন তাহার কথায় আমার বিশ্বাস হইল না।

 প্রায় এক ঘণ্টা পরে আমার মনে হইল যে আমরা পথ হারাইয়াছি এবং বনের মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছি। সময়ে সময়ে ঘোড়া পথ না পাইয়া

২৪