পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রতীক্ষায়।

দাঁড়াইতেছিল, এক্কার চাকা দুইখানি গাছের গুঁড়িতে ঠেকিয়া যাইতেছিল, কিন্তু আমার সারথি আমাকে বুঝাইয়া দিল যে, ঠিক পথেই চলিতেছে। অল্পক্ষণ পরে মনে হইল আমরা উচ্চে উঠতেছি; তাহার পরেই ঘোড়া থমকিয়া দাঁড়াইল। বিদ্যুতের আলোকে দেখিলাম সম্মুখে এক প্রকাও দীর্ঘিকা। এক্কাচালক তখন বাধ্য হইয়া এক্কা ফিরাইল, দীর্ঘিকার পার্শ্ব হইতে এক্কা আসিয়া সমতলক্ষেত্রে পড়িল। ইহার অল্পক্ষণ পরেই সম্মুখে বাধা পাইয়া ঘোড়াটি পড়িয়া গেল, সঙ্গে সঙ্গে আমি এক্কা হইতে লাফাইয়া পড়িলাম। দেখিলাম সম্মুখে একটী প্রাচীরের ভগ্নাবশেষ, ঘোড়া তাহতেই আঘাত পাইয়া পড়িয়া গিয়াছে। উভয়ে এক্কা হইতে নামিয়া ঘোড়াটিকে তুলিলাম। এই সময়ে উজ্জ্বল বিদ্যুতালোকে চতুর্দ্দিক উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল, দেখিলাম দূরে একটা ধূসরবর্ণ স্তুূপ, বোধ হইল উহা কোন বৃহৎ অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ। দ্বিতীয়বার বিদ্যুৎ চমকিয়া উঠিলে এক্কাচালককে জিজ্ঞাসা করিলাম যে সে কিছু চিনিতে পারিতেছে কি না। সে বলিল “না।” আমি তখন তাহাকে অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ দেখাইয়া দিলাম। তখন তাহার মুখ শুকাইয়া গেল; সে বলিল “বাবুজি, আপনি এক্কায় উঠিয়া বসুন, এখনই এখান হইতে চলিয়া যাই, এই স্থান বড় ভাল নহে, ইহা সয়তানের আবাস।” আমি তাহার কথা উড়াইয়া দিবার জন্য হাসিয়া উঠিলাম, কিন্তু সে কিছুতেই বুঝিল না, বরং অধিক আগ্রহের সহিত আমাকে এক্কায় উঠতে অনুরোধ করিতে লাগিল।

 বৃষ্টিতে গায়ের সমস্ত কাপড় ভিজিয়া গিয়াছে, ঝড় উত্তরোত্তর বাড়িতেছে, এক একটা দম্‌কা বাতাস আসিয়া যেন অস্থিভেদ করিয়া মজ্জার মধ্যে প্রবেশ করিতেছে। এমন অবস্থায় উপস্থিত আশ্রয় পরিত্যাগ করিতে

২৫