পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

বেড়াইতে লাগিলাম, দেখিলাম একটি খিলানে ঘাসের বেড়া কাটিয়া ঝাঁপের দরজা তৈয়ারী করা হইয়াছে, কিন্তু দরজা ভিতর হইতে বন্ধ। অনেক ডাকিলাম, কাহারও উত্তর পাইলাম না। তখন বাধ্য হইয়া ঝাঁপের বেড়া ভাঙ্গিয়া ফেলিলাম, দুই একবার পদাঘাত করিতেই ঝাঁপ পড়িয়া গেল, আমরা ঘরের ভিতরে প্রবেশ করিলাম।

 দেখিলাম গৃহের এককোণে রজতনির্ম্মিত পাত্রে দুইটি বাতি জ্বলিতেছে। গৃহতলে একখানি অতি প্রাচীন গালিচা বিস্তৃত আছে, তাহা স্থানে স্থানে একেবারে ছিঁড়িয়া গিয়াছে এবং নিম্নের মসৃণ শ্বেত মর্ম্মর বাহির হইয়া পড়িয়াছে। গৃহে আসবাব বড় অধিক কিছু ছিল না; এককোণে একটি পাথরের মেজ, তাহার উপরে রূপার শামাদান; খিলানগুলিতে মো্টা কাপড়ের পর্দ্দা ঝুলান; একটি খিলানের নীচে বহুমূল্য কারুকার্য্য খচিত একটি কাঠের সিন্ধুক এবং তাহার পার্শে একখানি ক্ষুদ্র খাটিয়া, তাহাও বোধ হয় চন্দন কি মেহগনিকাষ্ঠে নির্ম্মিত; তাহাতে নীলরঙ্গের রেশমের মশারি ফেলা, দেখিলেই বোধ হয় কে যেন শয়ন করিয়া আছে। গৃহে প্রবেশ করিয়া দুই তিনবার ডাকিরা বলিলাম, “গৃহে কে আছ, আমরা পথ হারাইয়া বিপন্ন হইয়াছি ও তোমাদের আশ্রয় লইয়াছি।” কেহই যখন উত্তর দিল না, তখন খাটের নিকটে আসিলাম, মশারি তুলিয়া দেখিলাম পীতবর্ণের রেশমের লেপে আপাদমস্তক আবৃত করিয়া কে যেন নিদ্রা যাইতেছে। খাটয়ার নীচে দুইখানি জরির কাজ করা লপেটা পড়িয়া আছে। লেপের উপরে হাত দিয়া দেখিলাম যে, সত্য সত্যই একটি মানুষ শুইয়া আছে। আস্তে আস্তে দুইতিন বার তাহাকে ধাক্কা দিলাম, তাহাতেও যখন সে উঠিল না, তখন একবার

৩০