পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রতীক্ষায়।

দরবারে আমার প্রায়ই তলব পড়িত। দিল্লী ও লক্ষনৌতে আমার তন্‌খা বাঁধা ছিল। কোম্পানী বাহাদুর আসিয়া যখন অন্ধ বাদশাহ শাহ আলমকে মারাঠার হস্ত হইতে মুক্ত করিয়া দিল, তাহার তিন বৎসর পরেই বাদশাহের মৃত্যু হয়। আকবর বাদশাহ হইলে তাহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা গোলাম আলি মাসে দশহাজার টাকা বৃত্তি পাইতেন। শাহজাদা বড়ই নৃত্যগীতপ্রিয় ছিলেন, তাহার মজলিসে আমার প্রায়ই মজুৱা করিতে যাইতে হইত। তিনি আমাকে বড়ই ভালবাসিতেন, ক্রমশঃ ঘনিষ্ঠত বাড়িয়া উঠিল, তাহার পর আমি মজিলাম!

 “বাবুজি আমি জাতিতে হিন্দু সুতরাং শাহজাদা ভরসা করিয়া কিছু বলিতে পারিতেন না। সত্তর বৎসর পূর্ব্বে আমি বড়ই সুন্দরী ছিলাম, সে কথা তুমি এখন বিশ্বাস না করিলেও করিতে পার। তখন নবাব ও শাহজাদারা আমার জন্য পাগল হইয়া বেড়াইত। আমি কখনও কাহাকে অনুগ্রহ করি নাই, কিন্তু গোলাম আলির রূপে ও গুণে মুগ্ধ হইয়া নিজেই মজিলাম,—মুসলমানী হইলাম। গৃহত্যাগ করিয়া মহলে প্রবেশ করিলাম, শাহজাদা আমাকে বিবাহ করিলেন,—আমি তাঁহার উপপত্নী হই নাই। সম্রাট আকবরশাহ তখন কোম্পানী বাহাদুরের আশ্রিত, কিন্তু তখনও দিল্লীতে তাঁহার যথেষ্ট ক্ষমতা ছিল। তিনি বিবাহের কথা শুনিয়া জ্বলিয়া উঠিলেন। ইহার অন্য কারণও ছিল। শাহজাদা গোলাম আলি সম্রাটের প্রধান মহিষীর ভগিনীকে বিবাহ করিয়াছিলেন। শ্যালিকার প্ররোচনায় আকবর শাহ আমাদিগের বিবাহবন্ধন ছিন্ন করিতে কৃতসঙ্কল্প হইলেন। শাহজাদা বাধ্য হইয়া দিল্লী পরিত্যাগ করিলেন, অবশ্য আমাদিগকে লইয়া।

 “এই যে অট্টালিকা দেখিতেছ ইহা মালবের প্রাচীন বাদশাহদিগের

৩৭