পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অভাগিনী।

তাহা কি আমার বলিবার যো আছে, তাহা হইলে ছোঁড়ার দল অমনি ক্ষেপিয়া উঠিবে আর গ্রামময় রাষ্ট্র করিয়া দিবে যে, হারুখুড়ার আফিমের নেশা ছাড়িয়া বিবাহের নেশা ধরিয়াছে; আমার যে আর ছাড়িবার উপায় নাই, তা কি ছোঁড়া বুড়া কোন বেটা বুঝে? আর আমি এমনই পাগল হইয়াছি যে, দক্ষিণ দিকে পা করিয়া বিবাহের জন্য পাগল হইব? বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ের বিবাহের কথা বলিতে গিয়া কত আপদ বালাই আসিয়া জুটল। বন্দোপাধ্যায় জামাতা যখন সিড়ির উপরে এবং উঠানে তাহার সাড়ে তিন মণ বপুখানি চড়াইয়া মন্ত্র বলিবার নাম করিয়া হাঁপাইতেছিল, তখন মেয়েটি চুপ করিয়া বসিয়াছিল, আর মাঝে মাঝে কাঁপিয়া উঠিতেছিল, সে কম্পনের অনেক লোকে অনেক ব্যাখ্যা করিল, নবীন দল বলিল, “মেয়েটি ভবিষ্যৎ ভাবিয়া শিহরিয়া উঠিয়াছে,” প্রবীণের দল বলিল, “মহিষের ভয়ে কাঁপিতেছে,” মাঝ থেকে গিরিশ বসু বলিয়া উঠিল, “বাবাজী আমার মনে কচ্ছেন যে, কনে আনন্দে শিউরে উঠছে।” বর-বেচারা আর কি করে একবার আকর্ণবিশ্রান্ত দশনপঙ্‌ক্তি বিকাশ করিয়া হাসিল। মন্ত্রদানের পর বর উঠিয়া গেল, তখন জামাতার রূপ দেখিয়া বন্দোপাধ্যায় গৃহিণী কাঁদিয়া লুটাইয়া পড়িল, তাঁহার দেখাদেখি অন্দরে আর যে যেখানে ছিল এক একবার সুর ধরিল; আমার মৌতাতটা নষ্ট হয় দেখিয়া একটা হুঁকা লইয়া বাহিরে আসিয়া বসিলাম। তখন বেগতিক দেখিয়া বাদ্যকরেরা ঢোল সানাই লইয়া সরিবার উপক্রম করিতেছিল।

 যাক্‌, বিবাহটা তো চুকিয়া গেল। বরভায়া ক্ষীণ তনুখানি বহুকষ্টে পাল্কীজাত করিয়া ফুলশয্যার স্বপ্ন দেখিতেছিলেন। ষোল জন

৪৩