পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অভাগিনী।

মাচায় করিয়া হরিবোল দিতে দিতে জামাইটাকে খাটে লইয়া গেল, তখন হাঁফ ছাড়িয়া বাহিরের ঘরে আসিয়া বসিলাম। জামাইটা অনেক দিন ধরিয়া বহুমূত্রের পীড়ায় ভূগিতেছিল, নানা স্থানে চিকিৎসা করিয়াও যখন, সারিল না, তখন শ্বশুর বাড়ী উপস্থিত হইল, বলিল, “গ্রামের ধরণী কবিরাজের চিকিৎসা করাইতে আসিয়াছি।” ধরণী কবিরাজের চিকিৎসা হইতে না হইতে জামাইটা ত মরিল, মরিয়াও আমায় একটা অখ্যাতি দিয়া গেল। সেইদিন রাত্রিতে গ্রামের লোক যখন দাহ করিয়া ফিরিল, তখন পাড়ার সকলে কমলাকে নদীতে লইয়া গেল, তাহার ক্ষীণ রোদনধ্বনি এখনও আমার কানে লাগিয়া আছে।

8

 মেয়েটা বিধবা হইলে বন্দ্যোপাধ্যায় বড় আঘাত পাইল, বৎসর ফিরিতে না ফিরিতে সেও জামাতার অনুসরণ করিল; তখন শিশুপুত্র ও বিধবা কন্যা লইয়া বন্দ্যোপাধ্যায়-গৃহিণী দেশে ফিরিয়া গেল। আমাদের গ্রামে ক্রমে লোকে বাড়ুয্যের নাম ভুলিয়া গেল। আমার দিন আর কাটে না, বিষম বিপদ্‌ উপস্থিত, শুনিলাম সরকার হইতে নাকি আফিমের চাষ তুলিয়া দিবে। গিরিশ বসুর ছেলেটা কলিকাতায় ইংরাজী পড়িয়া একেবারে মাটি হইয়া গিয়াছে, সে বেটা এল, এ-না—বি, এ কি ছাই পাস করিয়া আসিয়া গ্রামখানাকে যেন কিনিয়া ফেলিয়াছে। গ্রামে আর তিষ্ঠাবার যো নাই, দিন রাতই সভাসমিতি, হট্টগোল, গোলযোগ। ষষ্ঠতলায় একখানা নূতন চালা বাঁধিয়াছে; প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় গ্রামের যত ব্যাটা একত্র হইয়া নরক গুলজার করে। সেদিন সন্ধ্যার সময়ে গাঙ্গুলিপাড়া হইতে ফিরিতেছি, এমন সময় পাষণ্ডগুলা আমাকে ধরিয়া

৪৫