পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অভাগিনী।

খুড়া কাশী চলিয়া গেল; গেলত গেল,—আমার মনটা কিন্তু হরণ করিয়া লইয়া গেল। সাত পাঁচ ভাবিয়া কাশীযাত্রা করাই স্থির করিলাম। দেশের বিষয়ের অংশটি জ্ঞাতিরা ভোগ করিবে, তাহা আমার অসহ্য বোধ হইল। বিষয়-আশয়, তৈজসপত্র অবশেষে ভদ্রাসনখানি বিক্রয় করিয়া কাশীযাত্রা করিলাম। এখন আর বলিতে দোষ কি? সত্তর বৎসর পরে জন্মভূমির মায়া কাটাইলাম; দেশ ছাড়িতে বড় বিশেষ কষ্ট হয় নাই, কারণ জীবন রায়ের খুড়া বলিয়া গিয়াছিল যে, কাশীতে আফিম বড় সস্তা।

 বিশ্বেশ্বরের রাজধানী বড় সুন্দর স্থান। যাহারা বুড়া বয়সে কাশীবাস করিতে আসে তাহারা বড় সুখেই থাকে। এখানে আসিয়া বড় আনন্দেই দিন কাটিতেছে। দুধ, ঘি, মালাই, রাবড়ী, এমন কি আফিম পর্য্যন্ত জলের দর। বাঙ্গালীটোলায় এক গৃহস্থের বাটীতে একখানি ঘর ভাড়া লইয়াছি; বাড়ীওয়ালারা চারি সহোদর, চারিজনেই বিবাহিত, তাহাদিগের সংসারে গৃহিণী নাই। অপর পরিবারের মধ্যে এক বিমাতা, তাহার বয়স বড়বধুর সমান। বুড়া বলিয়া তাহারা আমাকে পরিবারের মধ্যে স্থান দিয়াছিল, তাহাদিগের মধ্যে বড় এবং মেজ-বৌ একটু বয়ঃস্থা, মুতরাং মুখ ফুটিয়াছে, সেজ এবং ছোট তখনও বালিকা। সংসারে বড় এবং মেজ-বৌ কর্ত্রী, বিধবা শাশুড়ী পাচিকা, এমন কি দাসী বলিলেও চলে। ব্রাহ্মণকন্যা একা সংসারের সমস্ত কাজ করিত। নীরবে বউ দুইটির শাসন সহ্য করিত এবং দিনান্তে এক মুষ্টি অন্ন পাইয়াই সন্তুষ্ট পাকিত। আমাকে দেখিয়া দিনকতক সে সন্ত্রম করিয়াছিল, ক্রমে মাথার কাপড় সরিয়া গেল, মুখ ফুটিল, স্বর সপ্তমে উঠিল, ক্রমে অসহ্য হইয়া

৪৭