পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আহ্বান।

নিন্দার ভয়ে কন্যাকে শুভ্র বসন পরিতে দিতেন না, ইন্দু মলিন বদনেই দিন যাপন করিত। লোকে তাহাকে দেখিয়া ভস্মাচ্ছাদিত অনলশিখা জ্ঞানে মস্তক অবনত করিত।

 গৌরসুন্দর মিত্র গ্রামের একজন প্রধান ধনী। তিনি অতি সামান্য অবস্থা হইতে অধ্যবসায় ও ভাগ্যবলে অতুল ঐশ্বর্য্যের অধিপতি হইয়াছিলেন। চঞ্চলা কমলা তাঁহার গৃহে আসিয়া কিছুদিনের জন্য বিশ্রাম লাভ করিয়াছিলেন। পুত্র, পুত্রবধূ, পৌত্র, পৌত্রী, আত্মীয়স্বজন, দাসদাসীতে গৌরসুন্দরের বিশাল বাসভবন সর্ব্বদা পরিপূর্ণ থাকিত। সংসারে তাঁহার কোন অভাব ছিল না, কিন্তু তথাপি বহুকাল তাঁহার মুখে কেহ হাসি দেখে নাই। দশ বৎসর পূর্ব্বে গৌরসুন্দরের হাসির উৎস শুকাইয় গিয়াছিল; একমাত্র কন্যার বৈধব্য তাঁহার বুকে শেলের ন্যায় বিদ্ধ হইয়াছিল। তাহার পর আর কেহ তাহাকে হাসিতে দেখে নাই।

(২)

“আমার চিরসঞ্চিত এস হে, আমার চিতবাঞ্ছিত এস!
ওহে চঞ্চল, হে চিরন্তন, ভুজবন্ধনে ফিরে এস।”—

 যে গাহিতেছিল তাহার কণ্ঠ বড় মধুর। কীর্ত্তনের মধুর স্বর চারিদিক যেন মাতাইয়া তুলিতেছে। গীতধ্বনি পর্ব্বতের উপত্যকা হইতে উখিত হইতেছিল, তাহা শুনিয়া তৃষ্ণাকুল মৃগযুথ নদীতীরে ফিরিয়া দাঁড়াইল। বন্ধুর শিলাসস্কুল পার্ব্বত্য উপত্যকায় তেমন মধুর শব্দ কেহ কখনও শুনে নাই। যে ধ্বনি একদিন যবনের বজ্রাদপি কঠোর হৃদয় দ্রবীভূত করিয়াছিল, তাহা কঠিন পাষাণের কাঠিন্য দূর করিয়া কোমল শয্যায় পরিণত করিয়া দিল। ক্ষুদ্রা স্রোতস্বিনী-তীরে পাষাণ খণ্ডের উপরে বসিয়া আর

৫৩