পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

আর ত হল না দেখা, জগতে দোঁহে একা,
চিরদিন ছাড়াছাড়ি যমুনা তীরে;—।”

 ইন্দু সভয়ে চাহিয়া দেখিল, গঙ্গী-সৈকতে শুভ্রবালুকা-ক্ষেত্রে অস্পষ্ট মূর্ত্তি গান গাহিতে গাহিতে চলিয়াছে। গায়ক পুরুষ, পরিধানে শ্বেত বস্ত্র, কিন্তু ইন্দু তাহা দেখিতে পাইতেছিল না। সে দেখিতেছিল সিক্ত বালুক-সৈকতে মোহনমূরতি নব-জলধর শ্যাম নাচিয়া চলিয়াছে। বাঁশীর বাদ্যের তালে তালে, রাঙা চরণের তালে তালে, রুণু রুণু ঝুমু ঝুমু নুপুর বাজিতেছে। পীতবাস জোছনা-ধারায় রজত-ধবল হইয়া গিয়াছে, যমুনা-পুলিনে শ্যামসুন্দর নাচিয়া নাচিয়া চলিতেছে। চূড়ায় শিখি-পাখা হেলিতেছে, দুলিতেছে, তালে তালে ভ্রমরকৃষ্ণ অলকগুচ্ছ লম্ফ দিয়া পৃষ্ঠের উপর পতিত হইতেছে। এই তাহার শ্যামসুন্দর, এই তাহার মানসমোহন। অশ্রুর উৎস কোথায় লুক্কায়িত ছিল, জলে তাহার নয়ন দুটি ভরিয়া আসিল; তথাপি সে দেখিতে পাইল চাঁদনী যামিনীতে যমুনাপুলিনে বংশীধর নাচিয়া নাচিয়া চলিয়াছেন। নয়ন দুটি মুদিয়া আসিল, দেহ অবসন্ন হইয়া পড়িল, ধীরে ধীরে প্রাচীর আশ্রয় করিয়া ইন্দু ছাদের উপরে বসিয়া পড়িল। তখনও দূরে মৃদু মৃদু ধ্বনি হইতেছিল—

“আরত হলনা দেখা জগতে দোঁহে একা,
চিরদিন ছাড়াছাড়ি যমুনা-তীরে।”

 ইন্দু মনে মনে অপূর্ব্ব শান্তি অনুভব করিতেছিল। এত তৃপ্তি তাহার জীবনে সে কখনও পায় নাই। শীতল নিশীথ সমীরণ আসিয়া তাহাকে ব্যজন করিতেছিল। সে ধীরে ধীরে মুক্ত ছাদে ঘুমাইয়া পড়িল।

৬০