পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গুচ্ছ।

কেহই কর্ণপাত করেনা। সকলে যখন বেড়াইতে যায়, ইন্দু তখন গৃহের নিকটবর্ত্তী একটি ভগ্ন মন্দিরের সম্মুখে গিয়া বসিয়া থাকে।

 মন্দিরটি বহু পুরাতন, কত পুরাতন কেহ বলিতে পারে না। তাঁহাতে কি বিগ্রহ ছিল, তাহাও কেহ বলিতে পারে না। অধিষ্ঠাত্রী দেবতার সহিত মন্দিরের সৌভাগ্যও অদৃশ্য হইয়াছে। বৃহৎ বৃহৎ অশ্বথ ও বট তাহার শীর্ষ-স্থান অধিকার করিয়াছে; মন্দিরের অভ্যন্তরে দেবতার পরিবর্ত্তে নিশাচরগণ বাস করিয়া থাকে। পুরাতন মন্দিরটির সম্মুখে একটি পুষ্করিণী ছিল, কালে তাহাও ভরিয়া আসিয়াছে; প্রস্তরনির্ম্মিত ঘাট বনময় হইয়া উঠিয়াছে। গ্রামবাসিগণ এখনও সেখানে পূজা দিতে আসিয়া, থাকে, অমাবস্যায়, পূর্ণিমায় জীর্ণ মন্দিরের প্রাঙ্গণটি লোকে ভরিয়া যায়। তাহারা আশ্চর্য্য হইয়া ইন্দুকে দেখে, ভাবে বনমধ্যে রজনীগন্ধার স্তবক কোথা হইতে আসিল। ইন্দু লজ্জায় দূরে সরিয়া যায়।

 দ্বিপ্রহরে অশ্বখ বৃক্ষের ছায়ায় বসিয়া ইন্দু পুষ্করিণীর পঙ্কিল জলে মৃণালের অপূর্ব্ব শোভা দেখিত, আর ভাবিত সে যদি একবার এই পথ দিয়া যায়, তাহা হইলে দিবালোকে প্রাণ ভরিয়া একবার তাহাকে দেখিয়া লয়। সে ত আর কিছুই চাহে না, শুধু চোখের দেখা। গ্রামের বৃদ্ধারা বলিতেন “শ্যামমুন্দরের দর্শন দুর্লভ; কত তপস্যায়, কত আয়াসে তাঁহার দর্শন মিলে।” সে ভাবিত, সে এত কি পুণ্য করিয়াছে যে সেই দুল্লভ দর্শনের সাক্ষাৎ পাইবে। সে আবার ভাবিত, যাহারা সাধনা করিয়া, তপস্যা করিয়া শ্যামসুন্দরের দর্শন পায়, শ্যামসুন্দর ত তাহাদিগের নহে; এই জন্য তাহাদিগের অত কষ্ট করিতে হয়। কিন্তু শ্যামসুন্দর ত তাহার

৬২