পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পরিবর্ত্তন।

হইয়া যাইতেছিল। একটি বৃহৎ অট্টালিকার অন্দর মহলে চণ্ডীমণ্ডপের দালানে দাঁড়াইয়া বামা ঠাকুরঝি ভীষণ রণ-রঙ্গের অভিনয় করিতেছিলেন। বামা ঠাকুরঝি বন্দীপুর গ্রামের বধু মাত্রেরই ঠাকুরঝি এবং কন্যা মাত্রে- রই বামা দিদি। বেঁটেখাট গড়ন, পাকা মিসির মত রং, বয়স অনিশ্চিত, যুবতী বলিলেও চলে, অথবা প্রৌঢ়া বলিলেও চলে। ঠাকুরঝি চিরসধবা, পরণে একখানি লাল কস্তা পেড়ে সাড়ী, হাতে দুগাছি অতি প্রাচীন সোনার বালা এবং সীমন্তে সুদীর্ঘ সিন্দুর-লেখা! বামা ঠাকুরঝি সধবা বটে, কিন্তু গ্রামে কেহ কখনও ঠাকুর জামাইকে আসিতে দেখে নাই। গ্রামের বধূরা কখনও ঠাকুর জামাইয়ের কথা জিজ্ঞাসা করিতে ভরসা করিত না, যদি কোন প্রগল্‌ভা মেয়ে বাপের বাড়ী আসিয়া বামা দিদিকে ঠাট্টা করিয়া তাহার স্বামীর কথা জিজ্ঞাসা করিত, তাহা হইলে বাম তাহাকে বিলক্ষণ দশ কথা শুনাইয়া দিত। কোন্দলে কেহ কখনও বামাকে জিতিতে পারে নাই, সে যেখানে চেঁচাইয়া জিতিতে পারিত না, সেখানে কাঁদিয়া জিতিত। পিতৃ, মাতৃ ভ্রাতৃ, পুত্র-কন্যা-হীনা বন্ধ্যা ব্রাহ্মণকন্যাকে বন্দীপুর গ্রামের সকলেই শমনের ন্যায় ভয় করিত এবং সম্ভব হইলে দূর হইতে দেখিয়া সরিয়া পড়িত।

 এ হেন দিগ্বিজয়ী বামা ঠাকুরঝির সম্মুখে দাঁড়াইয়া হরবল্লভ মুখোপাধ্যায়ের বিধবা পত্নী দারুণ গ্রীয়েও অষ্টমী পূজার জন্য উৎসর্গীকৃত ছাগ শিশুর দ্যায় কাঁপিতেছিলেন।

 বন্দীপুর নদীয়া জেলায় একখানি বিশিষ্ট গ্রাম। গ্রামের মুখোপাধ্যায় বংশ বহুকালের প্রাচীন জমীদার। লোকে বলিত তাঁহারা নবাবী আমলের জমিদার। চারিটি পুত্র রাখিয়া হরবল্লভ মুখোপাধ্যায়ের

৬৯