পাতা:গুচ্ছ - কাঞ্চনমালা বন্দ্যোপাধ্যায়.djvu/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পরিবর্ত্তন।

ললাটে করাঘাত করিয়া কাঁদিয়া উঠিলেন, বলিলেন “ওরে আমার হেমের বৌএর বরাতে এই ছিল?”

 হরবল্লভের পত্নী অনেকদিন কাশীবাস করিয়াছেন, বৎসরান্তে কন্যা, জামাতা ও দৌহিত্র তাঁহাকে দেখিতে আসে। বৃদ্ধা প্রভাতের কার্য্য শেষ করিয়া রন্ধনের উদ্যোগ করিতেছেন, কন্যা নিকটে বসিয়া আছেন; মাতা বলিতেছেন “দ্যাখ্‌ শিউলি, এখন আর চোখে ভাল দেখতে পাই না, কোনদিন রাঁধতে রাঁধতে পুড়ে মরব, তুই জামাইকে বলে একটি ভদ্রবংশের ব্রাহ্মণের মেয়ে ঠিক করে দিতে পারিস্‌?” কন্যা স্বামীকে বলিয়া মাতার জন্য পাচিকা ঠিক করিল, যথাসময়ে পাচিকা, রন্ধন করিতে আসিল। পাচিকার প্রথম যৌবন অতীত হইয়াছে, দেখিলে বোধ হয় এককালে তাহার রূপ ছিল, কিন্তু সমস্তই যেন জ্বলিয়া গিয়াছে, অগ্নি নির্ব্বাপিত হইয়াছে, অঙ্গারমাত্র অবশিষ্ট আছে। মাতাপুত্রী জানালায় বসিয়া জনস্রোত দেখিতেছিলেন, পাচিকা রন্ধন করিতে করিতে সতৃষ্ণ নয়নে তাঁহাদিগকে দেখিতেছিলেন। কন্যা বলিতেছে “মা বামুন ঠাক্‌রুণকে যেন কোথায় দেখিয়াছি।” মাতা উত্তর করিলেন “আমারও যেন তাই মনে হয় মা, কিন্তু ভরসা করে কিছু ব’ল্‌তে পারছি না, জীবনে কত লোকই দেখলুম, কত লোকই এলো গেল, বিশ্বেশ্বর কেবল আমায় ভুলে রয়েছেন, কবে যে দয়া কর্ব্বেন তা জানি না।” শেফালিকার সন্দেহ দূর হইল না, সে উঠিয়া গিয়া পাচিকাকে ডাকিয়া আনিল। পরিচয় জিজ্ঞাসা করায় সে আর স্থির হইয়া থাকিতে পারিল না, কাঁদিয়া বৃদ্ধার চরণতলে লুটাইয়া পড়িয়া বলিল “মা আমি তোমারই বড় বৌ, মুখ পোড়াইয়া কাশীবাস করিতে

৮১