পাতা:গৃহদাহ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SOS গাহদাহ সে যে সেই গিয়াছে, আর আসে নাই, ইহা শােধ এখনই চোখে পড়িল । অচলা মািখ বাড়াইয়া দেখিল, শোবার ঘরের পদার ফাঁক দিয়া আলো দেখা যাইতেছে । রামবােব ক্ষদ্ধ ও লক্ষিজাত হইয়া বার বার বলিতে লাগিলেন, আমার বড় অন্যায় হয়েছে । তোমাকে এমন ধরে রাখলাম যে, তাঁর খাওয়া হ’ল কি না, তুমি চোখে দেখতে পেলে না । এখন যাও মা তুমি থেতে—- অচলা এ-সকল কথায় বোধ হয় কোন কান দিল না। ভূত্যকে প্রশ্ন করিল, কোচম্যান গাড়ি জড়ে ঠিক সময়ে আনেনি কেন ? ভূত্য কহিল, নাতন ঘোড়া, এই ঝড়-জল-অন্ধকারে বার করতে তার সাহস হয় না । তা হলে আর কোন গাড়ি আনা হয়নি কেন ? তৃত্য চুপ করিয়া রহিল । কিন্তু তাহার অর্থ অপরাধ স্বীকার করা নয়, বরণ প্রতিবাদ করা যে, এ হকুম ত তাহারা পায় নাই । রামবােব উৎকন্ঠার পরিবতে লঙ্কজা পাইয়াই ক্ৰমাগত বলিতে লাগিলেন, গাড়ির আবশ্যক নেই—না গেলেও ক্ষতি নেই।--কেবল প্ৰত্যুষে সেন্টশনে গিয়ে হাজির হতে পারলেই চলবে । আমি রাত্রে কিছই খাইনে, আমার সে কাঞ্চােটও নেই।--শােধ, তুমি দটি খেয়ে নিয়ে শতে যাও মা কথায় কথায় বড় রাত হয়ে গেছে-বন্ড অন্যায় হয়ে গেছে । এই বলিয়া একরকম জোর করিয়াই তাহরকে নীচে যাইবার জন্য পাঠাইয়া দিলেন এবং মিনিট-পনের পরে সে উপরে আসিতে, ব্যগ্র ও উৎসক হইয়া বলিতে লাগিলেন, আর এক মিনিট দেরি নয়। মা, তুমি শতে যাও । আমি এই বসবার ঘরের কোচখানার উপর দিব্যি শতে পারব, আমার কোন কন্টে, কোন অসবিধা হবে না। --শােধ, তুমি শমতে যাও সারমা, আমি দেখি । ব্যুদ্ধের সনিবন্ধ আবেদন ও নিবেদন এবং পািনঃ পািনঃ উত্তেজনা আচলাকে যেন আচ্ছন্ন করিয়া ধরিল । যে মিথ্যা সম্পমান, প্রীতি ও শ্রদ্ধা সে তাহায় এই নিত্য শভাকাঙক্ষী পিতৃব্যসম ব্যুদ্ধের নিকট হইতে এতকাল শােধ প্রতারণার দ্বারাই পাইয়। আসিয়াছে, সেই লোভেই এই তাহার একান্ত দঃসময়ে কন্ঠরোধ করিয়া অপ্রতিহত বলে সরেশের নিজন শয়নমন্দিরের দিকে ঠেলিতে লাগিল । তাহার মনে পড়িল, এমনি এক ঝড়-জাল-দিদিনের রাত্রিই একদিন তাহাকে স্বামীহারা করিয়াছিল, অ্যাজ আবার তেমনি এক দদিনের দরতিক্রম্য অভিশাপ তাহাকে চিরদিনের মত সীমাহীন অন্ধকারে ডবাইতে উদ্যত হইয়াছে । কাল অসহ্য অপমানে, লতাজার গভীরতর পণ্ডেক তাহার আকন্ঠ মগন হইয়া যাইবে, ইহা সে চোখের উপর সম্পন্ট দেখিতে লাগিল, কিন্তু তব্যও আজিকার মত ওই মিথ্যাটাই জয়মালা পরিয়া তাহাকে কোনমতেই সত্য প্রকাশ করিতে দিল না । আজ জীবনের এই চরম মাহতে অভিমান ও মোহই তাহার চিরজয়ী হইয়া রহিল । সে বাধা দিল না, কথা কহিল না, একবার পিছনে চাহিয়াও দেখিল না-নিঃশব্দে ধীরে ধীরে সরেশের শয়ন-কক্ষে গিয়া উপস্থিত হইল ।