পাতা:গৃহদাহ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S. গহীদাহ পিসীমা ঘােড় নাড়িয়া বলিলেন, শানেছি বৈ কি মা ! ভগবানকে তাই সদাই বলি, ঠাকুর, অামি বেচে থাকতে যেন আমাকে আর সে দেখা দেখিয়ো না-মাথায় করতে পারব না । বলিতে বলিতেই তাঁহার গলা ধরিয়া গেল । তাঁহার সেই মাতৃস্নেহমশিন্ডত মাখের সকাতর প্রার্থনা শনিয়া অচলার নিজের চোখ-দটি সজল। হইয়া উঠিল ; কারণকন্ঠে কহিল, আপনি নিষেধ করে দেন না কেন পিসীমা । পিসীমা চোখের জলের ভিতর দিয়া ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, নিষেধ । আমার নিষেধ কি হবে মা ? যার নিষেধে সত্যি সত্যি কাজ হবে, আমি তাকেই ত অ্যাজ কত বছর থেকে খাজে বেড়াচ্চি । কিন্তু সে ত যে-সে মেয়ের কাজ নয় । ওকে বাঁচাতে পারে, তেমন মেয়ে ভগবান না দিলে আমি কোথার পাব মা ? অচলা কিছশক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করিল, আপনার মনের মত মেয়ে কি কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না ? পিসীমা কহিলেন, ঐ যে তোমাকে বললাম মা, ভগবান না দিলে কোনদিন কেউ পায় না । যে সমরেশ কখনো এ কথায় কান দেয় না, সে নিজে এসে যেদিন বললে, যে কি আনন্দ হয়েছিল, তা মদখে জানানো যায় না। মনে মনে আশীবাদ করে বললাম, তোর মাখে ফুলচন্দন পড়ােক বাবা । সেদিন আমার কবে হবে ষে, বৌ-ব্যাটা বরণ করে ঘরে তুলিব ? কত বললাম সরেশ, আমাকে একবার দেখিয়ে নিয়ে আয়, কিন্তু কিছতেই রাজী হল না, হেসে বললে, পিসীমা, আশীবাদের দিন একেবারে গিয়ে দিনস্থির করে এসো । তার পর হঠাৎ একদিন শািন্ধ এসে বললে, সবিধে হ’ল না পিসীমা, আমি রাত্রির গাড়িতে পশ্চিমে চললাম । কত জিজ্ঞাসা করলাম, কিসের অসবিধে আমাকে খালে বল, কিন্তু কোন কথাই বললে না, সেই রাত্রেই চলে গেল । মনে মনে ভাবলাম, শািন্ধ আমার ইচ্ছাতেই ত আর হতে পারে না—সেমেয়েরও ত জন্ম-জন্মান্তরের তপস্যা থাকা চাই । কি বল মা ? অচলা নীরবে ঘাড় নাড়িল । এতক্ষণে সে টের পাইল-মেয়েটি যে কে, পিসীমা তাহা জানেন না । তাহার একবার মনে হইল বটে।--তাহার বকের উপর হইতে একটা পাথর নামিয়া গেল-কিন্তু পাথরখানি যে সহজে যায় নাই, বকের অনেকখানি স্থান ছিাড়িয়া পিষিয়া দিয়া গিয়াছে, তাহা পরীক্ষণেই আবার যেন পািট অনভব। করতে লাগিল । আহারের আয়োজন হইলে পিসীমা অচলাকে আলাদা বসাইয়া খাওয়াইলেন। এবং সঙ্গে করিয়া বাড়ির প্রত্যেক কক্ষ, প্ৰতি জিনিসপত্র ঘরিয়া ঘরিয়া দেখাইয়া আনিয়া, সহসা একটা নিশ বাস ফেলিয়া বলিলেন, মা, ভগবানের আশীবাদে অভাব কিছরই নেই-কিন্তু এ যেন সেই লক্ষীহীন বৈকুণ্ঠ । মাঝে মাঝে চোখে জল রাখতে পারিনে বেীমা । চাকর আসিয়া খবর দিয়া গেল, বাহিরে কেদারবাব যাইবার জন্য প্রস্তুত।”