পাতা:গৃহশ্রী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৃহশ্ৰী আবার এমন অনেক সংসারও আছে, যাহাতে সকল জিনিষই সুন্দর দেখাইতেছে ; তথায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্রব্যগুলিও যেন দৃঢ়সঙ্কল্প হইয়া দারিদ্র্যের মলিনতা ঢাকিবার জন্য প্ৰাণপণ চেষ্টা করিতেছে। সাধারণ একটা বিজ্ঞা পনের ছবি বঁাশের ফ্রেমে বাধাই হইয়া ঘর আলো করিতেছে ; অতি সামান্য শয্যা পরিষ্কার চাদরে ঢাকা থাকিয়া সুন্দর দেখাইতেছে ; গৃতের উঠানটি ধবৃধবে, ভাড়ারে চাল-ডাল অতি যত্নসহকারে রক্ষিত ; দরিদ্রের সংসার, তবুও দেখিলে চক্ষু জুড়ায়। লক্ষ্মীস্বরূপিণী গৃহিণীর হস্তের কৌশল যেন সমস্ত মালিন্য ঘুঢ়াইয়া দিয়াছে। গৃহে দারিদ্র্য প্ৰবেশ করিয়াছে সত্য, কিন্তু ভুল করিযাছে বলিয়া যেন শঙ্কিত হইয়া আছে ! ধনীর বাড়ীতে বহু খরচ-পত্ৰ হইতেছে। বড় বড় রুই কাতলা আসিতেছে ; ভাল ঘি ও নানাবিধ শাক সঙ্গী মাথায় করিয়া মুটে দিনরাত্ৰি আনাগোনা করিতেছে ; কিন্তু হয় ত ব্যবস্থার অভাবে তাহা কাহারও তৃপ্তি সাধন করিতে পাব্লিতেছে না। ভঁড়গুলি মলিন, তাহদের গায়ে তৈল, ঘি, ময়দা প্ৰভৃতির সঙ্গে বহুদিনের ময়লা জমিয়া গিয়াছে। ভাড়ারে চালডাল, ময়দা কতক কতক মাটীতে পড়িয়া আছে, ঘবে যে ইচ্ছা, সে সেই ভাবে তাহার ব্যবহার করিতেছে ; ইন্দুর, কাক, আরশোলা সেখানে দস্তুর মত বাসা বাধিয়া আছে ; রান্নাঘরে কয়লা ও তৈলের শ্ৰাদ্ধ হইতেছে ; চাকর-চাকরাণীরা ও রাধুনী সুবিধা পাইলেই চুরি করিতেছে ও নানা খাদ্যদ্রব্য ও মিষ্টাম্নের সমাগম সত্ত্বেও হয় ত কৰ্ত্তা ও শিশুগণ খাবার সময অনেক জিনিষই পাইলেন না। যাহার অসুখ, সে সময়মত পথ্য পাইল না ; ঔষধ খাইবার সময় দেখা গেল, একটা অনুপান ভুলক্রমে আসে নাই ; রাত্রে হঠাৎ কাহারও জর হইলে দেখা গেল, ভঁড়ারে এক টুকরা মিশ্রি নাই, বার্লি খাওয়ার সময় একটু কাগজি-লেবু পাওয়া গেল না, তখন বাজার বন্ধ ।