পাতা:গৃহশ্রী - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

G গৃহশ্ৰী আগুন চড়াইয়া ডেগ ও ফঁাড়ি নামাইয়া দিলেই খালাস, সুতরাং ত্যাহার উপর একেবারেই নির্ভর কবা চলে না । বিশেষ যাহার উপর সম্পূর্ণরূপে জীবন নির্ভর করে, সেই খাদ্যদ্রব্য প্ৰস্তুত করার ভার বেতনভুক ব্যক্তির উপর দিয়া নিশ্চিন্ত থাকা চলে না। সুতরাং অবস্থা উন্নত হইলে যে, পীলোক রান্নার সঙ্গে সম্পর্কবর্জিত হইবেন, এ ধারণা ভুল। কোন সমযে তিনি স্বঘং রান্নাকাৰ্য্যে ব্যাপৃত থাকিবেন।--তখন তঁাহাব অন্নপূর্ণ-মুষ্টি । তিনি শুধু রান্না করেন ও পরিবেশন কবেন, এজন্য তিনি অন্নপূর্ণ নহেন, রাধুনীও তাহা করিয়া থাকে। তঁহার রান্না ও পরিবেশন সমস্তই স্নেহজড়িত ; গৃতে কৰ্ত্তা তইতে ভৃত্যগণ, এমন কি, গৃহপালিত কুকুরটি পৰ্য্যন্ত সকলের প্রতিই তাতার স্নেহেব দৃষ্টি থাকিলে, সেই রান্না অমৃত-তুল্য হইয়া থাকে। এই জন্য তিনি অন্নপূর্ণ । আমাদের প্রাচীন বাঙ্গালী কবিগণ বহু স্থানে এই অন্নপূৰ্ণ-গৃহিণীর চিত্র কল্পনা করিয়া গিয়াছেন। ব্লামেশ্বরের ‘শিবায়ণে।” পরিবেশন-নিরত উমার মুষ্টি এইরূপ বৰ্ণিত আছে— “দিতে নিতে গতায়াত নাহি অবসর । শ্রমে হ’ল সজল কোমল কলেবর । ইন্দুমুখে মন্দ মন্দ ঘৰ্ম্মবিন্দু সাজে। মৌক্তিকের পংক্তি যেন বিদ্যুতের মাঝে ৷” যাহারা সুগৃহিণীর রাধা অন্ন খান নাই, তাহারা এই অন্নপূর্ণার চিত্র কোথাল পাইবেন ? কিন্তু যে সময়ে তিনি নিজে রান্না ও শ্রমভার অপরের হাতে দিবেন,- তখনও তিনি নিজে পরিবেশনের তত্ত্বাবধায়িকারূপে উপস্থিত থাকিবেন, কারণ, গৃহের এই ব্যাপারটি গৃহিণীর অপরিহার্য্য কৰ্ত্তব্য। গৃহের কে কি খাইল,~– এইজন্য উৎকণ্ঠ নারীহস্দিয়ের স্বাভাবিক স্নেহজনিত ; এই বৃত্তি নষ্ট করিলে রমণীর স্বভাবের বিকৃতি ঘটিয়া থাকে ।