পাতা:গোড়ায় গলদ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোড়ায় গলদ Sዓ এত ছলও জানে। ছিছি। এ কবিতাও তেমনি হয়েছে। আমি যদি কাদম্বিনী হতুম তো এমন পুরুষের মখ দেখতুম না। যে লোক চোদ্দটা অক্ষর সামলে চলতে পারে না, তার সঙ্গে আবার প্রণয় ! এ খাতা আমি ছিড়ে ফেলব— পৃথিবীর একটা উপকার করব— কাদম্বিনীর দেমাক বাড়তে দেব না। পুরুষের বেশে হরিলে পুরুষের মন, *F (এবার ) নারীবেশে কেড়ে নিয়ে যাও জীবন মরণ। এর মানে কী ! কদম্ব যেমনি আমা প্রথম দেখিলে, কেমন করে ভূত্য বলে তখনি চিনিলে । ও মা ! ও মা ! ও মা ! এ যে আমারই কথা ! এইবার বুঝেছি পোড়ারমুখী কাদম্বিনী কে ! ( হাস্য) তাই বলি, এমন করে কাকে লিখলেন ! ও মা, কত কথাই বলেছেন। আর-একবার ভালো করে সমস্তটা পড়ি ; কিন্তু কী চমৎকার হাতের অক্ষর ! একেবারে যেন মুক্তো বসিয়ে গেছে। মীরলে পাঠ [নীরবে প পশ্চাৎ হইতে খাতা অন্বেষণে নিমাইয়ের প্রবেশ কিন্তু ছন্দ থাক না-থাক পড়তে তো কিছুই খারাপ হয় নি। সত্যি, ছন্দ নেই বলে আরো মনের সরল ভাবটা ঠিক যেন প্রকাশ হয়েছে। আমার তো বেশ লাগছে। আমার বোধ হয় ছেলেদের প্রথম ভাঙা কথা যেমন মিষ্টি লাগে, কবিদের প্রথম ভাঙা ছন্দ তেমনি মিষ্টি লাগে; পড়তে গেলে বুকের ভিতরটা কী একরকম করে ওঠে— বড়ো বড়ে কবিতা পড়ে এমন হয় না। মেঘনাদবধ, বৃত্রসংহার, পলাশির যুদ্ধ, সে-সব যেন ইস্কুলের বই— এমন সত্যিকার না। ( খাতা বুকে চাপিয়া ) এ খাতা আমি নিয়ে যাব— এ তো আমাকেই লিখেছেন। আমার এমনি আনন্দ হচ্ছে! ইচ্ছে করছে এখনি দিদিকে গিয়ে জড়িয়ে ধরি গে ! আহা, দিদি যাকে বিয়ে করছে তাকে নিয়ে যেন খুব খুব খুব সুখে থাকে— যেন চিরজীবন আদরে সোহাগে কাটাতে পারে। ( প্রস্থানোদ্যম। পশ্চাতে ফিরিয়া নিমাইকে দেখিয়া ) ও মা ! [মুখ আচ্ছাদন নিমাই। ঠাকরুন, আমি একখানা খাতা খুঁজতে এসেছিলুম— (ইন্দুমতীর দ্রুত পলায়ন) জন্ম জন্ম সহস্ৰ বার আমার সহস্র খাতা হারাক— কবিতার বদলে যা পেয়েছি কালিদাস তার কুমারসম্ভব শকুন্তলা বাধা রেখে এমন জিনিস পায় না। [মহা উল্লাসে প্রস্থান তৃতীয় দৃশ্য বিবাহসভা লোকারণ্য ৷ শঙ্খ হুলুধ্বনি । সানাই নিবারণ। কানাই ! ও কানাই! কী করি বলো দেখি। কানাই গেল কোথায়। শিবচরণ। তুমি ব্যস্ত হোয়ো না ভাই। এ ব্যস্ত হবার কাজ নয়। আমি সমস্ত ঠিক করে দিচ্ছি। তুমি পাত পাড়া হল কিনা দেখে এসো দেখি। 净 ভৃত্য। বাবু, আসন এসে পৌচেছে সেগুলো রাখি কোথায়। নিবারণ। এসেছে । বাচা গেছে। তা সেগুলো ছাতে— শিবচরণ। ব্যস্ত হচ্ছ কেন দাদা। কী হয়েছে বলো দেখি। কী রে বেটা, তুই স্থা করে গাড়িয়ে রয়েছিস কেন। কাজকর্ম কিছু হাতে নেই না কি।