পাতা:গোড়ায় গলদ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোড়ায় গলদ ○> শিবচরণ। না, সে হবে না—তুই ওঠ আমি দেখে যাই— নিমাই। আপনার যে ভারি কষ্ট হবে। শিবচরণ। সেজন্যে তোকে কিছু ভাবতে হবে না— তুই ওঠ পালকিতে। নিমাই। কী করি—পালকিতে ওঠা যাক, আজ সকালবেলাটা মাটি হল। [পালকি-আরোহণ শিবচরণ। ( বেহারার প্রতি ) দেখ, একেবারে সেই পটলডাঙার কালেজে নিয়ে যাবি, কোথাও | থামাবি নে [পালকি লইয়া বেহারাগণ প্রস্থানোমুখ নিমাই। ( জনাস্তিকে বেহারাদের প্রতি ) মির্জাপুর চন্দ্রবাবুর বাসায় চল, তোদের এক টাকা বকশিশ দেব, ছুটে চল। 彎 [প্রস্থান শিবচরণ। আজ আর রুগি দেখা হল না। আমার সকালবেলাটা মাটি করে দিলে। [প্রস্থান দ্বিতীয় দৃশ্য চন্দ্রকান্তের বাসা চন্দ্ৰকাত্ত চন্দ্রকান্ত । নাঃ ! এ আগাগোড়া কেবল ছেলেমানুষি করা হয়েছে। আমার এমন অনুতাপ হচ্ছে ! মনে হচ্ছে, যেন আমিই এ-সমস্ত কাগুটি ঘটিয়েছি। ইদিকে এত কল্পনা, এত কবিত্ব, এত মাতামাতি, আর বিয়ের দুদিন না যেতে যেতেই কিছু আর মনে ধরছে না। ওঁদের জন্যে একটি আলাদা জগৎ ফরমাশ দিতে হবে। একটি শান্তিপুরে ফিনফিনে জগৎ— কেবল চাদের আলো, ঘুমের ঘোর আর পাগলের পাগলামি দিয়ে তৈরি ! নিমাই। কী হচ্ছে চন্দরদী। চন্দ্রকান্ত। না, নিমাই, তোরা আর বিয়ে-থাওয়া করিস নে । নিমাই। কেন বলো দেখি— তোমার ঘাড়ে ম্যালথসের ভূত চাপল নাকি । চন্দ্রকান্ত । এখনকার ছেলেরা তোরা মেয়েমানুষকে বিয়ে করবার যোগ্য ন’স । তোরা কেবল লম্বাচওড়া কথা ক’বি আর কবিতা লিখবি, তাতে যে পৃথিবীর কী উপকার হবে ভগবান জানেন। নিমাই। কবিতা লিখে পৃথিবীর কী উপকার হয় বলা শক্ত, কিন্তু এক-এক সময়ে নিজের কাজে লেগে যায় সন্দেহ নেই। যা হোক এত রাগ কেন । চন্দ্রকান্ত। শুনেছ তো সমস্তই। আমাদের বিনুর তার স্ত্রীকে পছন্দ হচ্ছে না। নিমাই। বাস্তবিক, এরকম গুরুতর ব্যাপার নিয়ে খেলা করাটা ভালো হয় নি। চন্দ্রকান্ত। বিনুটা যে এত অপদার্থ তা কি জানতুম। একটা স্ত্রীলোককে ভালোবাসবার ক্ষমতাটুকুও নেই ? একবার ভেবে দেখ দেখি ভাই— একটি বালিকা হঠাৎ একদিন রাত্রে তার আশৈশব আত্মীয়স্বজনের বন্ধন বিচ্ছিন্ন করে সমস্ত ইহকাল পরকাল তোমার বাম হস্তে তুলে দিলে আর তার পরদিন সকালবেলা উঠে কিনা তাকে তোমার পছন্দ হল না ! এ কি পছন্দর কথা !