পাতা:গোড়ায় গলদ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোড়ায় গলদ ᎹᎩ বিনোদবিহার । এই যে, আমি এখনই আপনার ওখানেই যাচ্ছিলুম। নিবারণ। কেন বাপু, আমার ওখানে তো তোমার কোনো মক্কেল নেই। বিনোদবিহারী। আজ্ঞে, আমাকে আর লজ্জা দেবেন না— আপনি বুঝতেই পারছেন— নিবারণ। না বাপু, আমি এখনকার কিছুই বুঝতে পারি নে— একটু পরিষ্কার করে খুলে না বললে তোমাদের কথাবার্তা রকমসকম আমার ভালোরূপ ধারণা হয় না। বিনোদবিহারী। আমার স্ত্রী আপনার ওখানে আছেন— নিবারণ। তা অবশ্য— তাকে তো আমরা ত্যাগ করতে পারি নে— বিনোদবিহারী। আমার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে তাকে যদি আমার ওখানে পাঠিয়ে দেন— নিবারণ। বাপু, আবার কেন পালকিভাড়াটা লাগাবে। বিনোদবিহারী। আপনারা আমাকে কিছু ভুল বুঝছেন । আমার অবস্থা খারাপ ছিল বলেই আমার স্ত্রীকে আপনার ওখানে পাঠিয়েছিলুম, নইলে তাকে ত্যাগ করবার অভিপ্রায় ছিল না। এখন আপনারই অনুগ্রহে আমার অবস্থা অনেকটা ভালো হয়েছে— এখন অনায়াসে— নিবারণ। বাপু, এ তো তোমার পোষা পাখি নয়। সে যে সহজে তোমার ওখানে যেতে রাজি হবে এমন আমার বোধ হয় না। বিনোদবিহারী। আপনি অনুমতি দিলে আমি নিজে গিয়ে তাকে অনুনয় বিনয় করে নিয়ে আসতে পারি। নিবারণ। আচ্ছা, সে বিষয়ে বিবেচনা করে পরে বলব। [প্রস্থান বিনোদবিহারী। বুড়োও তো কম একগুঁয়ে নয় দেখছি। যা হোক, এ পর্যন্ত রানীকে কিছু বলে নি বোধ হয়। চন্দ্রকান্তের প্রবেশ বিনোদবিহারী। কী হে চন্দর ! চন্দ্রকান্ত। আর ভাই, মহা বিপদে পড়েছি। বিনোদবিহারী। কেন, কী হয়েছে। চন্দ্রকান্ত। কী জানি ভাই, কখন তোদের সাক্ষাতে কথায়-কথায় কী কতকগুলো মিছে কথা বলেছিলুম, তাই শুনে ব্রাহ্মণী বাপের বাড়ি এমনি গা-ঢাকা হয়েছেন যে কিছুতেই তার আর নাগাল পাচ্ছি নে । 專 বিনোদবিহারী। বল কী দাদা। তোমার বাড়িতে তো এ দণ্ডবিধি পূর্বে প্রচলিত ছিল না। চন্দ্রকান্ত। না ভাই, কালক্রমে কতই যে হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছি নে। ইদিকে আবার দাসী পাঠিয়ে দু বেলা খোজ নেওয়া আছে, তা আমি জানতে পাই। আবার শাশুড়ি-ঠাকরুনের নাম করে যথাসময়ে অন্নব্যঞ্জনও আসে। মনে করি রাগ করে খাব না ; কিন্তু ভাই, খিদের সময়ে আমি না খেয়ে থাকতে পারি নে তা যতই রাগ হোক। క్గా । তবে তোমার ভাবনা কী । যদি শ্বশুরবাড়ি থেকে আর-সমস্তই পাচ্ছ, নাহয় একটি রহল । চন্দ্রকান্ত। না বিনু, তোরা ঠিক বুঝতে পারবি নে। তুই সেদিন বলছিলি বিয়ে না-করাটাই তোর মুখস্থ হয়ে গেছে। আমার ঠিক তার উলটো। প্রায় সমস্ত জীবন ধরে ঐ স্ত্রীটিকে এমনি বিশ্রী অভ্যেস করে ফেলেছি যে, হঠাৎ বুকের হাড় কখানা খসে গেলে যেমন একদম খালি-খালি ঠেকে, ঐ স্ত্রীটি আড়াল হলেও তেমনি নেহাত ফাকা বোধ হয়। মাইরি, সন্ধের পর আমার সে ঘরে আর ঢুকতে ইচ্ছে করে না ।